বামপন্থি এ রাজনীতিক এর আগেও ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
Published : 02 Jan 2023, 02:37 PM
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কট্টর ডানপন্থি জাইর বোলসোনারোকে হারানোর দু্ই মাস পর ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা দেশ পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ নিয়ে তৃতীয় দফায় তিনি দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন।
ব্রাজিল ও ওই অঞ্চলজুড়ে শ্রমজীবী, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে লুলা নামে ব্যাপক জনপ্রিয় বামপন্থি এ রাজনীতিক এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে তিনি বোলসোনারোকে হারান, জানিয়েছে বিবিসি।
শপথ নেওয়ার প্রথম ভাষণে লুলা ‘ভয়ানক ধ্বংসস্তূপের’ মধ্যে থাকা দেশ পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পূর্বসূরী বোলসোনারোর অনেক নীতির কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি। লুলার প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অনুষ্ঠানে ছিলেন না বোলসোনারো, কয়েকদিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে যান।
রোববার সকাল থেকেই ব্রাজিলের কংগ্রেসের সামনে লুলার হাজারও সমর্থক জড়ো হওয়া শুরু করে, আশপাশ ছেয়ে যায় ওয়ার্কার্স পার্টির লাল রংয়ে। এদিন দূরদূরান্ত থেকে সমর্থকরা রাজধানীতে আসেন তাদের নেতার শপথ অনুষ্ঠান দেখতে, উৎসব করতে।
সঙ্গীত উৎসব ‘লুলাপালোজা’য় অংশ নিতে জাতীয় পতাকার আদলে বানানো দুটি বিশালাকৃতির মঞ্চে পারফর্ম করতে সাম্বা কিংবদন্তি মার্তিনহো দ্য ভিলাসহ ষাটেরও বেশি জনপ্রিয় শিল্পীকে ভাড়া করা হয়।
“ঘৃণাকে জয় করেছে ভালোবাসা,” দেখা গেছে লুলার মতো সাজা এক ব্যক্তির হাতে থাকা ব্যানারে।
আরেকজনের ব্যানারে লেখা ছিল, “ব্রাজিলের এই পরিবর্তন, এই রূপান্তর দরকার ছিল।”
লুলার রাজ্য পেরনামবুকো থেকে আসা হুলিয়ানো বারেতো বলেন, অল্প কদিন আগেও তার দেশ ছিল ‘বিধ্বস্ত’। লুলা সব বদলে দেবেন বলেই আশা করছেন তিনি।
বামপন্থি লুলা আর তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ডো আকমেইন রোববার শপথ নিতে কংগ্রেস ভবনের দিকে যাওয়ার আগে ছাদ খোলা গাড়িতে চেপে সমর্থকদের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।
এ দুজন গত কদিন ধরে মন্ত্রিসভা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদে কাকে কাকে বসাবেন তা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
শপথ নেওয়ার পর দেওয়া ভাষণে লুলা সমগ্র ব্রাজিলবাসীকে আশা দেখানোর চেষ্টা করেছেন; বলেছেন, তিনি ব্রাজিলকে পুনর্গঠন করবেন এবং ব্রাজিলকে সবার দেশ বানাবেন।
ভাষণের অনেক পর্যায়েই তাকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে লোকজনের ভিক্ষা চাওয়া, খাদ্য চাওয়ার কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি কেঁদেও দেন।
লুলার এই পুনরুত্থান সত্যিই অকল্পনীয়। দুই দফা প্রেসিডেন্ট থাকার পর ক্ষমতা ছেড়ে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল তাকে, দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে ২০২১ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায় বাতিল হয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেওয়া ভাষণের বেশিরভাগ অংশেই লুলা ঐক্য এবং দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। মহামারী আর রাজনৈতিক মেরুকরণে বিপর্যস্ত দক্ষিণ আমেরিকার জন্য এই দুটি শব্দের গুরুত্ব এখন অপরিসীম।
তিনি বোলসোনারোর বিতর্কিত বন্দুক আইন যত শিগগির সম্ভব বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার ‘প্রতিশোধস্পৃহা’ নিয়ে কাজ করবে না, তবে যারা ভুল করেছে তাদের জবাব দিতে হবে।
তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের কোভিড-১৯ মোকাবেলার নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, মহামারীরকালে ব্রাজিলে ‘গণহত্যা’ হয়েছে, যে বিষয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।
লুলা মারিনা সিলভাকে ফের পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়েছেন, যিনি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাজনে ‘বন উজাড় শূন্যে’ নামিয়ে আনতে কাজ করবেন।
নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে ব্রাসিলিয়া রাজ্য তাদের পুলিশ বাহিনীর ‘১০০%’ মোতায়েন করেছিল। বোলসোনারোর কিছু সমর্থক বিঘ্ন ঘটাতে পারেন এই শঙ্কায় প্রায় ৮ হাজার পুলিশের কর্মকর্তা এদিন নিয়োজিত ছিলেন।
রোববার ছুরি ও বাজি নিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রবেশের চেষ্টা করা একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রাজিলের সামরিক পুলিশ।
বড়দিনের আগে রাজধানীর একটি বিমানবন্দরের কাছে একটি জ্বালানির ট্রাকে বিস্ফোরক রাখার চেষ্টা করার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ বোলসোনারোর এক সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তির আশা ছিল লুলার অভিষেকের আগে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করা, বলেছে তারা।
বোলসোনারোর কিছু সমর্থক এখনও সেনা সদরদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে সামরিক বাহিনীকে লুলার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ বৃহস্পতিবার ওই বিক্ষোভকারীদের সরাতে চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দেয়।
তবে বোলসোনারো তার এই ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমরা যে অন্য পক্ষের চেয়ে আলাদা, আমরা যে রীতি ও সংবিধানকে মান্য করি, তা দেখিয়ে দেওয়া উচিত।”