২০২০ সালে একবার রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে নাভালনিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেবার প্রায় মরতে মরতে বেঁচে ফেরেন তিনি।
Published : 17 Feb 2024, 10:19 PM
রাশিয়ার বিরোধীদলের নেতা এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনির কারাগারে আকস্মিক মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছেন না তার সমর্থকরা। প্রিয় নেতার মৃত্যুর শোক, স্মরণ ও প্রতিবাদ জানাতে দেশজুড়ে শুক্র ও শনিবার বিক্ষোভ করেন তারা।
রাশিয়ার অন্তত ৩০টি শহরে নাভালনির স্মরণে মিছিল হয়েছে এবং পুলিশ মিছিল থেকে অন্তত ৩৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে শনিবার জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাভালনিকে রাশিয়ায় পুতিনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী বলা হতো। যাকে নানাভাবে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। ২০২০ সালের অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন এই নেতা। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষায় জানায় যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
নাভালনি ও তার সমর্থকরা সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, রুশ সরকার বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাকে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মারার চেষ্টা করা হয়।
জার্মানিতে টানা পাঁচ মাস চিকিৎসার পর খানিকটা সুস্থ হয়েই নাভালনি দেশে ফিরে যান। সে সময়ে প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকায় অনেকেই তাকে রাশিয়ায় না ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এমনকি জার্মান সরকার থেকেও তাকে সেদেশে থেকে যেতে বলা হয়েছি। কিন্তু মাটির টানে রাশিয়া ফিরে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি।
তারপর বিচারের নামে প্রহসন করে তাকে নানান মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারেই রাখা হয়।
কারাগারে কয়েকবার সঠিক চিকিৎসার দাবিতে অনশনও করেছিলেন এই নেতা। সে সময় তারা চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘নাভালনির জীবন সুতায় ঝুলছে’।
গত ডিসেম্বরে নাভালনিকে নিয়ে যাওয়া হয় সোভিয়েত যুগের কুখ্যাত কারাগারে। যেটির নাম ‘আইকে-৩’, যা ‘পোলার উলফ’ বা ‘মেরু নেকড়ে’ নামেও পরিচিত। ভয়ানক অপরাধীদের এই কারাগারে রাখা হলেও রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে সেখানে রাখা হয়েছিল উগ্রপন্থায় উস্কানি এবং ওই সংক্রান্ত একটি সংগঠন চালানোর মত অভিযোগে।
শুক্রবার ওই কারাগারেই নাভালনির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ।
তার এমন মৃত্যু নিয়ে গোটা বিশ্বেই হচ্ছে আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো নাভালনির মৃত্যুর পেছনে পুতিনকেই দায়ী করছে। তাকে খুন করা হয়েছে বলেও দাবি তুলেছে নাভালনির পরিবার ও বিরোধী শিবির।
নাভালনির শিবির বলছে, কারা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর যে খবর জানিয়েছে, সেটি নাভালনিকে খুন করারই স্বীকারোক্তি বলেই তারা মানছেন।
নাভালনি আসলেই মারা গেছেন কিনা সেটা নিয়ে তার স্ত্রী সংশয় প্রকাশও করেছিলেন। পরে অবশ্য নাভালনি শিবির থেকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। যে মৃত্যুকে তারা খুন বলে বর্ণনা করেছেন।
নাভালনির মৃতদেহ শনিবারও তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ। নাভালনির মা এবং তার আইনজীবী কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে তার মৃতদেহ পাননি। নাভালনি শিবিরের অভিযোগ, হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে রুশ কর্তৃপক্ষ নাভালনির লাশ লুকিয়ে ফেলেছে।
রুশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নাভালনির মৃতদেহ ‘লুকিয়ে রাখার’ অভিযোগ
এখনই অনশন বন্ধ করুন, না হলে মারা যাবেন: নাভালনিকে তার চিকিৎসক