পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরে অভিযান চালিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বহু সমর্থক ও সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি লাহোরে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর যে কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
পিটিআই বলেছে, পুলিশ তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পুলিশ ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে তার লাহোরের বাসভবনে গিয়েছিল, কিন্তু দলীয় চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘিরে রাখা পিটিআইয়ের কর্মীরা পুলিশকে বাধা দিয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল, পরে শনিবার ইমরান ইসলামাবাদের আদালতের হাজির হওয়ার সময়ও তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
ইমরানের সহযোগী পিটিআইয়ের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “ইসলামাবাদ ও লাহোর থেকে প্রায় ২৮৫ জন পিটিআই সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রাতে (পিটিআইয়ের) সব গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।”
লাহোর ও ইসলামাবাদের পুলিশ অভিযান ও পিটিআই কর্মীদের গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছে। এই কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে তারা।
লাহোরের পুলিশ প্রধান বিলাল কামিয়ানা রয়টার্সকে বলেছেন, “দলটির নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা হয়েছে, তাই পুলিশ তাদের বাড়িগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে।”
গত সপ্তাহের কয়েকজনসহ লাহোর থেকে মোট ১২৫ জন পিটিআই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইসলামাবাদ পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত থাকায় এ পর্যন্ত ১৯৮ জন পিটিআই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবারের ওই সংঘর্ষে ৫৮ জন আহত ও পুলিশের কয়েকটি গাড়িসহ এক ডজনেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরও অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ২০১৮ থেকে ২০২২ এ পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে ক্ষমতা হারানোর আগে পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন এবং এ নিয়ে চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন।
ইমরানের পর দায়িত্ব নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পিটিআই নেতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, সূচী অনুযায়ী চলতি বছরের শেষের দিকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন ইমরান। এর মধ্যে একটি মামলায় শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এই পরোয়ানা নিয়েই গত মঙ্গলবার লাহোরে তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু পিটিআইয়ের কর্মীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়।
ইমরানের সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার এক নতুন পর্ব সূচিত হয়েছে।
সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী তাকে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ইমরানের। তার বিরুদ্ধে চলা কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ইমরান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন।
তবে পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনী, উভয়েই ইমরানের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।