প্রথম কোন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে তা স্পষ্ট নয়; তবে ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলছেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসই প্রথমে লাইনচ্যুত হয়েছিল।
Published : 04 Jun 2023, 01:16 PM
পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৮৮ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে; আহত হয়েছেন কয়েকশ, যাদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর।
বিবিসি লিখেছে, ভারতের ইতিহাসে শতাব্দীর সবচেয়ে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল, এখনও তা স্পষ্ট নয়।
দুর্ঘটনার পরপরই ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনা তদন্তে ‘উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি’ গঠনের কথাও জানালেন তিনি।
তবে শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ ঘটনার পেছনে ‘কারিগরী ত্রুটির’ কথা জানিয়ে বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক এক ঘটনা’, যা ‘ঘটার মত নয়’।
ভারতের এক কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব সার্কেলের রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনারের নেতৃত্বে ওই ঘটনার তদন্ত হবে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটের দিকে উড়িষ্যার বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে এই দুর্ঘটনা হয়, যা কলকাতা থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
দুর্ঘটনায় তিন ট্রেন
· করমণ্ডল এক্সপ্রেস: দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে পশ্চিমবঙ্গের শালিমার রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা করে ট্রেনটি দক্ষিণের শহর চেন্নাইয়ের দিকে যাচ্ছিল।
· হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস: বেঙ্গালুরুর যশবন্তপুর স্টেশন থেকে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল।
· মালগাড়ি: বাহানগা বাজার স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল।
সংঘর্ষ কীভাবে হয়েছে এবং প্রথম কোন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন বিবরণ রয়েছে। তবে ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসই প্রথমে লাইনচ্যুত হয়েছিল।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, বাহানগা বাজার স্টেশনে ট্রেনের চারটি লাইন রয়েছে। এর মধ্যে এক ও চার নম্বর লাইনে মালগাড়ি দাঁড় করানো ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো মাঝের দুই ও তিন নম্বর লাইন দিয়ে দুই দিকে যাতায়াত করছিল।
“এখন তদন্তের বিষয় হল, করমণ্ডল এক্সপ্রেস কেন লাইনচ্যুত হল এবং মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দিল। লাইনচ্যুত ট্রেনের বগিগুলো যাত্রীবাহী হাওড়া সুপারফাস্টের পেছনের দুটি বগিতে গিয়ে পড়ে এবং সেটিকেও লাইনচ্যুত করে ফেলে।”
আরও পড়ুন: উড়িষ্যার ট্রেন দুর্ঘটনা সিগন্যালের ভুলে?
উড়িষ্যা সরকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মোট ১৭টি বগি লাইনচ্যুত এবং মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রাও বলছেন, সংঘর্ষ হয়েছে তিনটি ট্রেনের।
বাহানগা স্টেশনের খুব কাছাকাছি থাকেন গিরিজা শঙ্কর রথ, যিনি দুর্ঘটনার পরই সেখানে ছুটে যাওয়া প্রথমদের একজন ছিলেন। বিবিসি হিন্দিকে তিনি বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
“পুরো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে, পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তারপর আমরা দেখলাম দ্রুত গতিতে ছুঁটে আসা হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের ধ্বংসাবশেষে ধাক্কা দিল এবং সেটিরও দুটির বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেল।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী টুটু বিশ্বাস বলেন, বিকট শব্দ শোনার পর তিনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন।
“করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কিছু বগি মালবাহী ট্রেনটির ওপরে উঠে যায়। মৃতদেহের পাশাপাশি অসংখ্য আহত মানুষ ছিল সেখানে। আমি এক বালককে পেয়েছিলাম যে তার বাবা-মাকে তখন হারিয়ে ফেলেছে। সে কাঁদছিল, পরে মারাও গেল।”
শুক্রবারের ওই ঘটনা ভারতের রেলওয়ের ইতিহাসে সবথেকে প্রাণঘাতী পাঁচ দুর্ঘটনার একটি।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) প্রধান অতুল কারওয়াল বলেন, সংঘর্ষের কারণে বেশ কয়েকটি বগি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসাবশেষ কেটে যাত্রীদের বের করে এনেছেন। শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, নার্স এবং উদ্ধারকর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। যাত্রীদের উদ্ধার ও মরদেহগুলো সরিয়ে নিতে ১৮ ঘণ্টা ধরে তারা কাজ করেছে।
ভারতের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বড়। সেখানে প্রতিদিন ১২ হাজারের বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে। দেশজুড়ে লাখ লাখ যাত্রী পরিবহেন করে ট্রেনগুলো। তবে সেখানে রেলওয়ের অবকাঠামোগত অনেক উন্নতি প্রয়োজন।