উড়িষ্যার ট্রেন দুর্ঘটনা সিগন্যালের ভুলে?

সরকারিভাবে উদ্ধারকাজ শেষ ঘোষণা করা হলেও ধ্বংসস্তূপে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাংশ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে এখনও চাপা পড়ে থাকতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 04:05 AM
Updated : 4 June 2023, 04:05 AM

দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেনের নাম জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী, অপরটি মালবাহী ট্রেন। দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত একাধিক বগি দুমড়ে মুচড়ে গেছে।

তদন্ত শুরু হয়েছে; প্রাথমিকভাবে সিগন্যালে ভুল কিংবা মানবসৃষ্ট ত্রুটিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

তবে এখনই কাউকে দায়ী করা হচ্ছে না, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের পর স্পষ্ট হওয়া যাবে, বলছেন কর্মকর্তারা।   

উড়িষ্যার ওই দুর্ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২৮৮ ও আহত আট শতাধিক বলে জানানো হয়েছে। চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, সরকারিভাবে উদ্ধারকাজ শেষ বলে ঘোষণা করা হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা শনিবার বিকালেও ধ্বংসস্তূপে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাংশ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে এখনও চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলেও তাদের আশঙ্কা।

ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ শনিবার দুপুরেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকাজ শেষ এবং বগি সরানো ও ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতের কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই কাজ শেষ হতে হতে মঙ্গলবার লেগে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।

মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় উড়িষ্যার এই দুর্ঘটনা এরই মধ্যে ১৯৯৯ সালে কলকাতার কাছে দুটি ট্রেনের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে মৃত্যুকে ছাড়িয়ে গেছে। দুই যুগ আগের ওই দুর্ঘটনা ২৮৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ‘আপ মেইন লাইনে’ সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ট্রেনটি সে লাইনে ঢোকেইনি।  

“ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।

‘‘এর মধ্যে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনেরও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কিন্তু মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী করে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যম রেলের সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, প্রথমে মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা তুলে নেওয়া হয়, যে কারণে চালক লুপে ঢুকে পড়েছিলেন।

স্টেশনগুলোতে লুপ লাইন রাখা হয়, সাধারণত কোনো ট্রেন যেন সেখানে দাঁড়াতে পারে এবং অন্য ট্রেনের জন্য লাইন ছেড়ে দিতে পারে।

করমণ্ডলের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ নিয়েও দুই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। যাত্রীবাহী এই ট্রেনটি লুপ লাইনে ঢুকে মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে লাইনচ্যুত হয়েছে, নাকি লাইনচ্যুত হওয়ার পর লুপ লাইনে থাকা মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।