“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
Published : 19 Jan 2024, 03:47 PM
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের মানবিক সহায়তার জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে আরো ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ নিয়ে মিয়ানমারের নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ২২০ কোটি ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এ তথ্য জানান।
জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। অধিবেশনের ফাঁকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আজরা জেয়া। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার, সে বিষয়টি আজরা জেয়াকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে আজরা জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে সেখানে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে; যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা।”
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ায় রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে,নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের কোনো দিশা তারা দেখছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাতটি দেশ ফ্রান্স, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও মালদ্বীপ এ বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে।
বৈঠকে বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস’ নির্বাচন দেখতে চায়, সে বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেন আজরা জেয়া।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রযোজন।”
তিনি বলেন, “আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না। ভোট কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। দেশের সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে।”
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, “আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ দেশই পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয় না। বিদেশিরা কিছু ভালোভাবে বর্ণনা করলে ভালো হবে, অন্যথায় ভুল হবে। আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ চালাতে চাই না।”
গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতুও এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিক বাহিনীর চালানো গণহত্যাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদসূত্র: বাসস
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)