উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু।
Published : 23 Nov 2023, 02:36 PM
উত্তর কোরিয়া মহাকাশে সফলভাবে একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের দাবি করেছে। যার কারণে নিজেদের নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে অভিযোগ তুলে দক্ষিণ কোরিয়া দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালে হওয়া কমপ্রিহেনসিভ মিলিটারি এগ্রিমেন্টের (সিএমএ) একটি অংশ স্থগিত করেছে।
বুধবার দক্ষিণের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেয়নি উত্তর কোরিয়া। পরদিনই তারা দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করার এবং নতুন নতুন অস্ত্র মোতায়েন করার হুঙ্কার ছাড়ে।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদ সংস্থা কেসিএন জানায়, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে চুক্তির অধীনে বন্ধ রাখা সব ধরণের সামরিক পদক্ষেপ পুনরায় চালু করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “এখন থেকে আমাদের সামরিক বাহিনী আর কখনো ‘সেপ্টেম্বর ১৯ উত্তর-দক্ষিণ সামরিক চুক্তির’ প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে না।”
দুই দেশের সীমান্তে একতরফা কোনও সংঘাতের ঝুঁকি কমাতে ওই চুক্তি হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা স্থল, সমুদ্র ও আকাশসহ সকল ক্ষেত্রে সামরিক উত্তেজনা ও সংঘাত প্রতিরোধের জন্য গৃহীত সামরিক পদক্ষেপ প্রত্যাহার করব এবং সামরিক সীমানা রেখা বরাবর এই অঞ্চলে আরও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী এবং নতুন ধরনের সামরিক অস্ত্র মোতায়েন করব।”
উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার এক বছরের মধ্যে তৃতীয় দফা চেষ্টায় গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণে সক্ষম হয়। এর আগের দুই দফায় দেশটি ব্যর্থ হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উই বিরল এক সফরে এ বছর রাশিয়া গিয়েছিলেন। দুই নেতার বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পিয়ংইয়ংকে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ধারণা, রাশিয়ার কারিগরি সহায়তা নিয়েই খুব সম্ভবত সর্বশেষ এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। দুই দেশের মধ্যে সামরিক অংশীদারিত্ব বাড়ছে। অভিযোগ আছে, পিয়ংইয়ং লাখ লাখ কামানের গোলা সরবরাহ করে ইউক্রেইন যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তা করছে। যদিও পিয়ংইয়ং এবং মস্কো উভয়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বলেছে, তাদের মধ্যে কোনো অস্ত্র চুক্তি হয়নি। তবে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বুধবার কেসিএনএ এর খবরে বলা হয়, তাদের মালিগিয়ং-১ নামের উপগ্রহ ‘যথাযথভাবে’ কক্ষপথে প্রবেশ করেছে এবং কিম নিজে উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর শিগগিরই এ ধরনের আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী জানায়, উত্তর কোরিয়ার উৎক্ষেপণ করা স্যাটেলাইট আসলেই কাজ করছে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
উ. কোরিয়া থেকে হামাসের মত হামলার আতঙ্কে দ. কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র জোরালভাবে উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিয়ান ওয়াটসন বলেছেন, “এই পদক্ষেপে ওই অঞ্চল এবং এর বাইরে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার ঝুঁকি আছে।”
কার্যকর একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ উত্তর কোরিয়ার পঞ্চবার্ষিক সামরিক পরিকল্পনার মূল একটি অংশ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু।