হামাস গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দেয়।
Published : 14 Nov 2023, 02:52 PM
উত্তর কোরিয়া কী গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মত করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অতর্তিক হামলা চালাবে- এ দুঃশ্চিন্তা এখন দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়ন সুক ইওলের মনেও। যে কারণে রোববার নিজ বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে সান্ধ্যভোজে আপ্যায়ন করার সময় তিনি উত্তর কোরিয়া থেকে যে কোনো ধরণের আক্রমণের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দেয় হামাস।
বিবিসি জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিক এবং প্রতিরক্ষা প্রধানরা এখন ওই হামলার সঙ্গে নিজেদের অবস্থার তুলনা করে দেখছেন এবং পিয়ংইয়ং দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কী কী করতে পারে তা হিসাব-নিকাশ করছেন।
গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এর প্রধান এ সংক্রান্ত একটি অনুমানে বলেছিলেন, যদি পিয়ংইয়ং ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে তবে যা প্রমাণ তারা পেয়েছেন সেটা ‘হামাসের আক্রমণের মতই হওয়ার’ ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে কী সত্যিই উত্তর কোরিয়ার আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া? নাকি এ যুদ্ধ কেবলই অতি সতর্ক দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার এবং প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার একটি কারণ দিচ্ছে।
হামাস প্রথমে গাজা থেকে বৃষ্টির মত ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দিশেহারা করে দেয়। সঙ্গে হামাসের গেরিলারা সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে রীতিমত হত্যাযজ্ঞ চালায়। হামাসের আক্রমণের এই ধরণকে অনেকে হাইব্রিড যুদ্ধের প্রাথমিক উদাহরণ বলছে।
এ বিষয়ে ‘টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি মিলিটারি স্ট্যাডিজ ইন্সটিটিউট’ এর রিসার্চ ফেলো রিইউ সুং-ইয়েওপ বলেন, “এখানে উল্লেখ করার মত বিষয় হলো, উত্তর কোরিয়া এ ধরণের আক্রমণ করতে ঐতিহ্যগতভাবেই সিদ্ধহস্ত।”
যদি উত্তর কোরিয়া এ ধরণের হাইব্রিড যুদ্ধ শুরু করে তবে সিউলকে ভুগতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
যেখানে হামাস ৭ অক্টোবর ভোররাতে ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে সেখানে পিয়ংইয়ংয়ের গোলন্দাজ বাহিনী মাত্রা এক ঘণ্টায় ১৬ হাজার কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে সক্ষম বলে জানান তিনি।
যেকোনো সময় আক্রমণ হতে পরে এই ঝুঁকি থেকে সিউল নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। অনেকটা ইসরায়েলের আয়রন ডোম এর মত।
অন্যদিকে, হামাস গাজায় ঠিক যেটা করেছে, উত্তর কোরিয়া নিজ দেশ তেমন একটি ভূগর্ভস্থ টানেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে বলে ধারণা করা হয়। যে টানেলগুলোর কোনো কোনোটি দুই কোরিয়ার মধ্যে অবস্থিত ‘অসামরিকীকরণ অঞ্চল’ এর নিচ দিয়ে গেছে বলেও বিশ্বাস করেন কেউ কেউ। যেগুলোতে অস্ত্র মজুদ করে রাখা হয়েছে এবং আক্রমণের সময় ব্যবহার হতে পারে।
উত্তর কোরিয়া থেকে হামলার হুমকি কতটা বাস্তব?
১৯৫০ থেকে ১৯৫৩, দুই কোরিয়ার মধ্যে এই তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখন বিরতি চললেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ অবসানে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। সে হিসেবে দশকের পর দশক ধরে দক্ষিণের উপর উত্তর কোরিয়ার হামলার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এবং বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উত্তর কোরিয়া সর্বশেষ ১৩ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় উল্লেখ করার মত হামলা চালায়। সেবার দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দ্বীপে উত্তর কোরিয়ার হামলায় দুই নৌসেনা এবং দুই বেসামরিক নিহত হয়।
নিরাপত্তা বিষেশজ্ঞদের মতে, তারপর থেকে উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। এখন তারা আর সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালাতে চায় না। বরং তাদের লক্ষ্য এখন রাজধানী সিউলকে ধ্বংস করা।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সব সময়ই নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষাকে সব কিছুর উপরে স্থান দিয়েছেন।
কোরিয়া ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশন এর নর্থ কোরিয়া রিসার্চ এর পরিচালক হং মিন বলেন, “যেখানে হামাস মূলত স্বল্পপাল্লার রকেটের উপর নির্ভর করে হামলা চালিয়েছে। সেখান উত্তর কোরিয়ার কাছে আরো বড় ও দীর্ঘ পাল্লার এবং বৈচিত্রময় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের হামলার সক্ষমতা হামাসের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশি।”
গত কয়েক বছরে পিয়ংইয়ং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারের। তারা এখন নিজেদের পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর দেশ বলে দাবি করে। বলেছে, তারা একটি স্বল্প-পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছে যেটা কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম।
তাই উত্তর কোরিয়ার আর হামাসের মত করে হামলা চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা চো সেঅং রিউল। তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়া একটি সার্বভৌম দেশ। তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনী এবং পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
“আর এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার কাছে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো কারণও নেই। তারা ইতোমধ্যেই একটি স্বাধীন দেশ।”