সুইজারল্যান্ডের জলবায়ু নীতিমালা নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে এ মামলা ঠুকেছিলেন দুই হাজারের বেশি বয়স্ক নারী।
Published : 09 Apr 2024, 11:41 PM
ইউরোপের শীর্ষ মানবাধিকার আদালতে ইতিহাসের প্রথম জলবায়ু মামলায় জয় পেয়েছে একদল সুইস নারী।
সুইজারল্যান্ডের জলবায়ু নীতিমালা নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অভিযোগ করে সরকারের বিরুদ্ধে এই মামলা ঠুকেছিলেন সত্তরের কোঠার বয়সের দুই হাজারের বেশি নারী।
মঙ্গলবার ইউরোপীয় আদালত তাদের পক্ষে রায় দিয়ে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুইস সরকার ব্যর্থ হওয়ায় দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিশ্ব ঊষ্ণায়নের প্রশ্নে ইউরোপের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক আদালত এই প্রথম এমন রায় দিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মামলা করতে এক জোট হওয়া ওই সুইস নারীরা নিজেদের বলছেন, ‘সিনিয়র উইমেন ফর ক্লাইমেট প্রোটেকশন’। তাদের অভিযোগ ছিল, সুইজারল্যান্ডে তাপপ্রবাহ চলার সময় তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারেন না এবং স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা তাপপ্রবাহের সময় বিশেষত, তাদের বয়সী মানুষদেরকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের তাপমাত্রা বিশ্বের গড়ের চেয়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে। আগের চেয়ে ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে তাপপ্রবাহ। সুইস ওই নারী দলটি চেয়েছিল, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ কমাতে সুইস সরকারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার নির্দেশ দিক ইউরোপীয় আদালত।
জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে নারী স্বাস্থ্যের আরও ভাল সুরক্ষার আবেদন জানিয়ে সুইস এই নারী দলটি ৯ বছর আগেই মামলা করেছিল। সুইজারল্যান্ডের আদালতে ছয় বছর মামলা চললেও সে আইনি লড়াই ব্যর্থ হয়।
সুইস আদালতগুলোতে বছরের পর বছর এই ব্যর্থতার পর নারীরা তাদের অভিযোগ নিয়ে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের (ইসিএইচআর) শরণাপন্ন হয়। এই আদালত ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে অবস্থিত।
কাউন্সিল অব ইউরোপের অংশ এটি। এই কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আলাদা ৪৬ সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এই আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে অনেক দেশের সরকার সবসময় আদালতের নির্দেশ মেনে চলে না।
তারপরও মঙ্গলবার জলবায়ু মামলায় আদালতটি যে রায় দিয়েছে, তাতে এটাই জাহির হয়েছে যে, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে জবাবদিহিতার মুখে দাঁড় করানো যেতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী এমন আরও মামলার পথ প্রশস্ত হতে পারে।
মঙ্গলবার দেওয়া রায়ে ইউরোপীয় আদালতের প্রেসিডেন্ট সিয়োফ্রা ও’লিয়ারি বলেছেন, সুইস সরকার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পদক্ষেপ নিতে জাতীয় বাজেট নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।
তাছাড়া, সুইস সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন রোধের নীতিমালাতেও গুরুতর ফাঁক আছে এমনটিও দেখা গেছে। “এটি স্পষ্ট যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সরকারের আজকের এই ব্যর্থতার মারাত্মক পরিণতি ভোগ করবে,” বলা হয় রায়ে।
এ রায়ের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কোনও মন্তব্য করার আগে তার এই রায় বিস্তারিত পড়ে দেখা দরকার। জলবায়ু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডে নেট জিরোতে পৌঁছার লক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।