জাপানে এক রেস্তোরাঁয় কনভেয়ার বেল্টে সাজানো সুশির প্লেটের খাবারে থুতু লাগিয়ে দেওয়া এবং সয়া সসের বোতল ও কাপ চেটে দিয়ে তামাশা (প্র্যাঙ্ক) করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
এ ধরনের তামাশায় অংশ নেওয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অনলাইনে তাদের এই কর্মকাণ্ড তকমা পেয়েছে ‘সুশিসন্ত্রাস’ (#সুশিটেরো বা #সুশিটেরোরিজম) নামে। এমন নোংরা, অস্বাস্থ্যকর তামাশার কারণে ধস নেমেছে রেস্তোঁরায় ব্যবসাতেও।
গত মাসে সুশি কনভেয়ার বেল্টে এক ব্যক্তির সয়াসসের বোতল চাটার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জাপানজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।জাপানের বিখ্যাত ‘কুরা সুশি রেস্টুরেন্ট’ এর একটি শাখায় ওই ভিডিও করা হয়।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আরও এক ডজনেরও বেশি একই ধরনের ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ পায়।যা নিয়ে সাধারণ জাপানিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রেস্তোরাঁয় কনভেয়ার বেল্টে অর্ডার করা খাবার একের পর এক পার হয়ে যাচ্ছে। যে গ্রাহক যে খাবার অর্ডার করেছেন, তিনি সেটি তুলে নেবেন। জাপানে এ ধরনের রেস্তোরাঁ খুবই জনপ্রিয়।
কিন্তু গত মাসের ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এবং তারপর আরো বেশ কয়েকটি একই ধরনের ভিডিও প্রকাশের পর এ ধরনের রেস্তোরাঁয় গ্রাহক উপস্থিতি প্রায় শূন্য হয়ে গেছে।
বিবিসি জানায়, রেস্তোরাঁগুলোর পক্ষ থেকে জনসম্মুখে বেশ কয়েকবার এভাবে তাদের খবার নষ্ট না করার অনুরোধ জানানো হয়।
কোনও কোনও রেস্তোরাঁ সুশি তৈরি বন্ধ রেখেছে। কনভেয়ার বেল্টেও আর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে না। তার বদলে রেস্তোরাঁর কর্মীরা গ্রাহকদের খবার পরিবেশন করছেন। এমনকী, টেবিলে কোনো মশলা বা সসের বোতল রাখা হচ্ছে না। কেবল মাত্র কোনো টেবিলে গ্রাহক বসলে সেখানে সেগুলো দেওয়া হচ্ছে।
জাতিগতভাবে জাপানিরা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। রন্ধন সম্পর্কীয় শিষ্টাচারের জন্যও তারা বিখ্যাত। এমন একটি দেশে শুধুমাত্র মজা করার জন্য এ ধরনের নোংরা কাণ্ড দেশটির লাখ লাখ মানুষকে হতবাক করেছে।
এ কাণ্ডের ফলে সুশির বিভিন্ন চেইন রেস্তোরাঁর শেয়ারের দর পড়ে গেছে।কুরা সুশি রেস্তোরাঁর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘ভিডিও ভাইরাল করার যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে তা খুবই বিপদজনক।
‘‘কনভেয়ার বেল্ট সুশি জাপানের সংস্কৃতির এমন একটা অংশ যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা গ্রাহকদের এই নিশ্চিয়তা দিতে চাই যে, তাদের জন্য বেল্টে যে সুশি ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে, তারা সেটি নিরাপদ ও সম্পূর্ণ স্বস্তির সঙ্গে খেতে পারেন।”
গত ৩ ফেব্রুয়ারি কুরা সুশি রেস্তোরাঁয় করা ভিডিওটি প্রথম ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জাপানের মধ্যাঞ্চলের নগরী নাগোয়া থেকে রিওগা ইওশিনো নামে ২১ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে।
তার ওই কাণ্ডের সঙ্গে ১৯ ও ১৫ বছর বয়সের আরো দুই জন জড়িত ছিল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তারা সবাই অন্যায় কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ। তাদের একজন নিজের কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জাপানের রেস্তোরাঁগুলোকে আগে থেকেই গ্রাহক সংকটে পড়তে হয়েছে।
এখন এভাবে খাবার নোংরা করার ঘটনা তাদের আরো ক্রেতা শূন্য করে দিয়েছে। কয়েকটি রেস্তোরাঁ খাবার নোংরা করা আটকাতে কনভেয়ার বেল্টে সেন্সর ও ক্যামেরা স্থাপন করেছে।