অনেক মামলায় বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দায়মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেই উদাহরণ টেনে খাশুগজি হত্যা মামলায়ও সৌদির প্রধানমন্ত্রী হওয়া মোহাম্মদ বিন সালমানের দায়মুক্তি আছে, বলেছেন তার আইনজীবীরা।
Published : 04 Oct 2022, 03:15 PM
চার বছর আগে তুরস্কে সাংবাদিক জামাল খাশুগজি খুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে মামলার মুখোমুখি হওয়া সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আইনজীবীরা বলেছেন, সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীত্ব ক্রাউন প্রিন্সের বিচার থেকে দায়মুক্তি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার ওয়াশিংটনের এক ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতকে তারা এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি গুপ্তচররা খাশুগুজিকে হত্যা ও তার মৃতদেহ গায়েব করে ফেলে।
গত কয়েকবছর ধরে সৌদি আরবের ‘ডি ফ্যাক্টো’ শাসক এমবিএস নামে খ্যাত প্রিন্স মোহাম্মদই ওই অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে ধারণা মার্কিন গোয়েন্দাদের।
সৌদি এ ক্রাউন প্রিন্স খাশুগজিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও এটি যে তার অধীনে থাকা লোকদের হাতেই হয়েছে, পরে তা স্বীকার করে নিয়েছেন।
গত সপ্তাহে তার ৮৬ বছর বয়সী বাবা বাদশা সালমান এক রাজকীয় ডিক্রি জারি করে প্রিন্স মোহাম্মদকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানান।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর যেসব কাজ, আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই এমবিএস সেগুলোই করে আসছেন বলে সৌদি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
“রাজকীয় আদেশের পর আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে ক্রাউন প্রিন্স তার মর্যাদা অনুযায়ী দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকার রাখেন,” ওয়াশিংটনের আদালতে এমবিএসের বিরুদ্ধে মামলা খারিজের আবেদন জানিয়ে বলেন তার আইনজীবীরা।
অন্য অনেক মামলায় বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের যুক্তরাষ্ট্র যে দায়মুক্তি দিয়েছে, তার উদাহরণও হাজির করেন তারা।
জ্বালানি ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে জুলাইয়ে সৌদি আরব সফরে গিয়ে ক্রাউন প্রিন্সের হাতের মুঠির সঙ্গে মুঠি মিলিয়ে ‘ফিস্ট বাম্প’ করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি যে খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রিন্স মোহাম্মদকে দায়ী মনে করেন, সে কথা এমবিএসকে জানিয়েছেন।
তবে প্রিন্স মোহাম্মদ ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন এবং যারা জড়িত ছিল, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বলেছিলেন বাইডেন।
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের নীতির কড়া সমালোচনা করা খাশুগজি তার বাগদত্তা, তুর্কি নাগরিক হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের ওই কনস্যুলেটে গিয়ে খুন হন।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে সেটি চেঙ্গিস এবং খাশুগজির প্রতিষ্ঠিত একটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে করেছে; মামলায় পশ্চিমা দেশগুলোতে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদের কাছে অনির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।
মামলায় ক্রাউন প্রিন্স ছাড়াও আরও ২০ জনের বেশি সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, খাশুগজি তার মানবাধিকার গোষ্ঠীকে সৌদি আরবে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন জানতে পেরে এমবিএস ও আসামির তালিকায় থাকা বাকিরা অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ‘খাশুগজিকে চিরতরে চুপ করিয়ে দেওয়ার’ ছক কষেন।
এ মামলায় প্রিন্স মোহাম্মদের দায়মুক্তি আছে কিনা, আদালত সে বিষয়ে ৩ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য জানতে চেয়েছিল।
গত সপ্তাহে প্রিন্স মোহাম্মদ সৌদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শুক্রবার মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় এ পরিবর্তনকে কারণ দেখিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আরও ৪৫ দিন বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করে।
সোমবার মার্কিন আদালতের বিচারক জন ডি বেটস ওই আবেদন অনুমোদন করে তাদেরকে প্রতিক্রিয়া জানাতে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেন।