গত শনিবার হামাসের হামলার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রামটিতে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করে ইসরায়েলি সেনারা।
Published : 11 Oct 2023, 06:34 PM
গাজা এবং ইসরায়েল সীমান্তবর্তী কাফার আজা গ্রাম, যেখানে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত লড়াই চলেছে। গত শনিবার সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধারা সেই গ্রামে ঢুকেই মানুষ হত্যা করেছিল।
নিহতদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতেই এখন ব্যস্ত গ্রামবাসী। হামলার দিনে মৃতদেহ সংগ্রহে নিয়োজিত ইসরায়েলি সেনারা বলছে, সেখানে গণহত্যা হয়েছে। তাদের মতে, গত শনিবার হামাসের হামলার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্যারাট্রুপারদের একটি অভিজ্ঞ দলের উপ কমান্ডার দাভিদি বেন জায়ন জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাদের ১২ ঘণ্টা লেগেছে গ্রামটিতে পৌঁছাতে। তিনি জানান, হামাস বন্দুকধারীরা শিশুসহ গ্রামের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে।
“জিহাদি জোশে তারা সবাইকে খুন করেছে, যাদের কোন অস্ত্র ছিলো না, কিছুই ছিল না। একেবারেই সাধারণ নাগরিক যারা সকালের নাশতা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।” এর মধ্যে কয়েকজনের শিরোচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান জায়ন।
মৃতদেহ বহনকারী একটি ব্যাগের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, নিহত ওই নারীকে খুন করার পর তার শিরোচ্ছেদ করা হয়েছে সামনের বাগানে।
গ্রামটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ডরা প্রথমেই হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়েছে। অন্যান্য ইসরায়েলিদের মতো কালো প্লাস্টিক ব্যাগে করে তাদের মৃতদেহ সরানো হয়েছে মঙ্গলবার সকালে।
২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলি গ্রামগুলোর মানুষ বিভিন্ন সময়ে রকেট হামলা দেখেছে। এই রকেট হামলার হুমকির মধ্যেও কাফার আজা এবং অন্য ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের মানুষেরা সুন্দর জীবনই উপভোগ করে আসছিল।
কাফার আজা ও ইসরায়েলের অন্যান্য জায়গায়ও কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে হামাস সেখানে হামলা চালিয়ে এত মানুষ খুন করে ফেলতে পারে। হামাসের হামলার ভয়াবহতা আর ইসরায়েলিদের ক্ষোভের সঙ্গে মিশে গেছে এই অবিশ্বাস যে, রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবারের হামলায় নিজেদের বহু নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েল বিপর্যস্ত। তবে গাজাতেও অনেক বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
বেসামরিক নাগরিক হত্যা করে হামাসের যোদ্ধারা যুদ্ধ সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘন করেছে সেটি স্পষ্ট। তবে হামাস যেভাবে হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে তার সঙ্গে বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর কোনওরকম তুলনা করতে রাজি নয় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের মেজর জেনারেল আইতাইয়ের দাবি, ইসরায়েল যুদ্ধ সংক্রান্ত আইনকে সম্মান করে এর বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছে। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, আমরা যুদ্ধ করি আমাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির জন্য...আমরা শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক হব, কিন্তু আমরা আমাদের নৈতিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখি। আমরা ইসরায়েলি, আমরা ইহুদি”।
যুদ্ধ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আইতাই। যদিও এটি নিশ্চিত যে, যত বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হবে ইসরায়েলকে তত বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।