লকডাউনে পার্টি: এমপি’দের কঠিন জেরায় বরিস জনসন

উনিং স্ট্রিটে মদের পার্টি নিয়ে পার্লামেন্টকে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলেননি বলে বেশ জোরের সঙ্গেই দাবি করলেন সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 03:36 PM
Updated : 22 March 2023, 03:36 PM

কোভিড মহামারীর লকডাউনের মধ্যে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে মদের পার্টির বিষয়ে পার্লামেন্টকে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে বুধবার কয়েকঘণ্টার কঠিন জেরার মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

এমপি’দের একটি কমিটি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এই প্রশ্নবাণের মুখে জনসনকে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে।

বিবিসি জানায়, অধিবেশনের শুরুতেই বাইবেলে হাত রেখে সত্য বলার শপথ নেন জনসন। জোরাল কণ্ঠেই তিনি বলেন, হাউজ অব কমন্সকে তিনি মিথ্যা বলেননি।

জনসন বলেন, হাউজ অব কমন্সের কাছে সবসময়ই তিনি পুরোপুরিই স্বচ্ছ ছিলেন। তবে অনিচ্ছকৃতভাবে হাউজ অব কমন্সকে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

বেপরোয়া এবং ইচ্ছাকৃতভাবে হাউজ অব কমন্সকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন জনসন।

জনসন ইচ্ছাকৃতভাবে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে কমিটি দেখতে পেলে তাকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্স থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। ১০ দিনের বেশি বরখাস্ত থাকলে জনসনের নির্বাচনী আসনে উপনির্বাচনের পট প্রস্তুত হতে পারে।

নানা কেলেঙ্কারির পর দলীয় অনাস্থার মুখে গত বছর সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন জনসন।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য জুড়ে যখন কঠোর লকডাউন চলছিল তখন নিজের কার্যালয়ে মদের পার্টি করে নিয়ম ভাঙেন জনসন।

তিনি সেখানেই খ্যান্ত হননি। বরং তার এই কেলেঙ্কারির কথা যখন ফাঁস হয় তখন নিজেকে বাঁচাতেও কিছু কাণ্ড করেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ওই সময় নিজেকে বাঁচাতে তিনি নিয়ম ভাঙা ওই পার্টির বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাচার করে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন। যা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।

পার্লামেন্টের কমিটি অব প্রিভিলেজেস এই তদন্ত করছে। যদি ওই কমিটি এই প্রমাণ পায় যে, জনসন ইচ্ছাকৃতভাবে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন, তবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্স থেকে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

আর সেই বহিষ্কারাদেশ ১০ দিনের বেশি হলেই তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সেখানে পুননির্বাচন হবে।

তথাকথিত এই ‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারিই’ মূলত প্রধানমন্ত্রী জনসনকে ডুবিয়েছে। ওই কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েক মাসের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, তিনি ও তার সরকারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে মদের পার্টি করেছে। যেখানে ওই সময়ে বাকি যুক্তরাজ্যকে ঘরের ভেতর অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়েছে।

যা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ এবং জনসনের বিরুদ্ধে বার বার মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠতে থাকায় অবশেষ তার সরকারের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ আরো বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। প্রবল চাপে জনসনও পদত্যাগে বাধ্য হন। ঋষি সুনাক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।

জনসনের মিথ্যাচার বিষয়ে তদন্ত করতে সাতজন আইনপ্রণেতা নিয়ে পার্লামেন্টের কমিটি অব প্রিভিলেজেস গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির বেশিরভাগ সদস্য জনসনের দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য।

এ মাসে ওই কমিটি প্রাথমিক একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়ে, জনসন সম্ভবত চারবার পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছে এবং ‘নিশ্চিতভাবেই’ নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জনসন মঙ্গলবার কমিটিকে পাঠানো একটি লিখিত প্রমাণপত্রে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে জোর দিয়ে এটাও ‍দাবি করেছেন, তিনি ‘স্বপ্নেও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু করার কথা ভাবেননি’।

ওই প্রমাণপত্রে জনসন কমিটি থেকে তার বিরুদ্ধে আনা কিছু অভিযোগকে অযৌক্তিক এবং হস্যকর বলেও বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, সেগুলো অত্যন্ত পক্ষপাতমূলক।

জনসন তার চিঠিতে আরও লিখেছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই যেটা নির্দেশ করে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন। এবং লকডাউনের মধ্যে নিজের কার্যালয়ে পার্টি করলে তা নিয়ম লঙ্ঘন হবে, তখন তাকে এ বিষয়ে কেউ সতর্কও করেনি।

বুধবারের জেরায় আত্মপক্ষ সমর্থনে জনসনের তার লিখিত পত্রে উল্লিখিত কথাগুলোই বলেছেন। যদিও কমিটি থেকে বলা হয়েছে, জনসন যে লিখিত প্রমাণপত্র পাঠিয়েছেন তাতেও অনেক ভ্রান্তি আছে এবং ‘নতুন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই’।

এখন কমিটি জনসনের বিরুদ্ধে কোনও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করলে তা অবশ্যই পার্লামেন্টে অনুমোদন পেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী সুনাক এ সপ্তাহে এ বিষয়ে বলেছেন, যদি জনসনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা নিয়ে পার্লামেন্টে কোনও ভোট হয় তবে তা দলীয় বিচারে নয় বরং আইনপ্রণেতাদের নিজস্ব বিশ্বাসের ভিত্তিতে হবে।