পেশাগত অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা টোকিও পুলিশ সেটাও খতিয়ে দেখছে।
Published : 03 Jan 2024, 05:57 PM
জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে কী কারণে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সঙ্গে কোস্ট গার্ডের ত্রাণবাহী উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে তা সম্ভাব্য একটি কারণ জানা গেছে।
জাপান কর্তৃপক্ষ ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার ট্রান্সক্রিপ্ট বুধবার প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, হানেদা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জাপান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিকে অবতরণের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তখনও কোস্ট গার্ডের ছোট্ট প্লেনটিকে উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং সেটিকে রানওয়ের পাশে একটি হোল্ডিং পয়েন্টে চলে যেতে বলা হয়েছিল।
সংঘর্ষের পর দুই উড়োজাহাজেই আগুন ধরে গেলেও জাপান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩৫০ এর ৩৭৯ আরোহীর সবাই অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। কয়েকজন সমান্য আহত হলেও তাদের কারো প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। যাত্রীদের সৌভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে কেবিন ক্রুদের দক্ষতার কারণে সেদিন বড় ধরণের প্রাণহানি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মত এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের।
তবে কোস্টগার্ডের ছোট্ট টার্বোপ্রপ ডি হ্যাভিল্যান্ড ড্যাশ-৮ এর আরোহীরা সৌভাগ্যবান ছিলেন না। সেটিতে থাকা ছয় আরোহীর পাঁচজনই ঘটনাস্থলে নিহত হন। সেটির ক্যাপ্টেন কোনো ক্রমে জীবিত বের হতে পারলেও মারাত্মক আহত হয়েছেন। একদিন আগেই জাপানের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল কোস্ট গার্ডের উড়োজাহাজটি।
বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের বার্তালাপের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ পেলেও কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটলো, কোনো পরিস্থিতিতে দুইটি উড়োজাহাজ একই রানওয়েতে উপস্থিত হলো তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
কারণ, কোস্ট গার্ডের উড়োজাহাজটির বেঁচে যাওয়া ক্যাপ্টেন দাবি করেছেন, অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি রানওয়েতে প্রবেশ করেছেন। কোস্ট গার্ড থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপানের সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, কোস্ট গার্ডের উড়োজাহাজটিকে উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত কন্ট্রোল টাওয়ারের ট্রান্সক্রিপ্টে নেই। কোস্ট গার্ড থেকেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে।
জাপানের নিরাপদ পরিবহন বোর্ড (জেটিএসবি) এই ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত দলে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরাও আছেন। কারণ, দুর্ঘটনায় পড়া এয়ারবাসটি ফ্রান্সে নির্মিত এবং সেটির ইঞ্জিন দুটি যুক্তরাজ্যের তৈরি।
জেটিএসবি কর্তৃপক্ষ কোস্ট গার্ডের উড়োজাহাজটির ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।
পেশাগত অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা টোকিও পুলিশ সেটাও খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। এজন্য বিমানবন্দরে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী পাঠানো হয়েছে। যারা এ ঘনটায় জড়িত সবার বক্তব্য শুনবে।
মঙ্গলবারের ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং জাপান এয়ারলাইন্সের সাবেক পাইলট হিরোইকি কোবাইয়াশি বলেন, “সেখানে মানব সৃষ্টি ত্রুটির জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
“শুধু একটি মাত্র কারণে বিমান দুর্ঘটনা আসলে তেমন ঘটে না বললেই চলে। একটি মাত্র কারণে বিমান দুর্ঘটনা খুবই বিরল। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার বেলাতেও দুই অথবা তিনটি কারণ দায়ী বলে আমার মনে হয়।”
মঙ্গলবার দুর্ঘটনার পর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে এয়ারবাসের সব আরোহীকে বের করে আনা সম্ভব হয়। তবে উড়োজাহাজটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সেটিতে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলেছে।
এ দুর্ঘটনার কারণে হানেদা বিমানবন্দরে বুধবারও ১৩৭টি অভ্যন্তরীণ এবং চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়।