ঠিক তিন মাস আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ যুদ্ধ এখন গাজার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
Published : 07 Jan 2024, 10:02 AM
গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস নেতৃত্বকে ‘সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বলেছে, সেখানে বর্তমানে হামাস বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের ‘নেতৃত্ব দেওয়ার মত কেউ আর নেই’।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ডেনিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা উত্তর গাজায় প্রায় আট হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
“ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এখন গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে হামাসকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দিকে মনযোগ দিয়েছে।”
বিবিসি স্বাধীনভাবে হাগারির এই দাবি যাচাই করতে পারেনি।
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করে। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরো ২৪২ জনকে। সেদিন থেকেই তীব্র আক্রশ নিয়ে গাজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী।
তাদের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শনিবারও তারা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ১২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজা এখন বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সেখানকার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই এখন গৃহহীন।
গাজায় ঠিক তিন মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। এই সময়ে মাঝে সাত দিন যুদ্ধবিরতি ছিল। যে সময়ে হামাস শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে বন্দি দুই শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে।
হামাসের হাতে এখনো প্রায় ১২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে। যুদ্ধ যেভাবে চলছে তাতে ওই জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত মাসে আইডিএফ অভিযান চালানোর সময় ভুলে তিন জিম্মিকে হত্যা করে। আরো পাঁচ জিম্মির লাশ গাজায় হামাসের একটি সুড়ঙ্গের ভেতর পাওয়া গেছে।
যুদ্ধের কারণে গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের উপর নেমে আসা মানবিক বিপর্যয় থামাতে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে গাজায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের উপর চাপ জোরাল হচ্ছে। কিন্তু গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত এ অভিযান বন্ধ হবে না বলে আবারও জোর দিয়ে বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
শনিবার তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং গাজা ভবিষ্যতে আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না, এমনটা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে।
“পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাকি সব কিছু পাশে সরিয়ে রাখতে হবে।”
এদিকে, গাজা যুদ্ধ ধিরে ধিরে আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে লেবাননে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই লেবানন সীমান্তে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের নিয়মিত গোলা বিনিময় হচ্ছে। সম্প্রতি বৈরুত উপকণ্ঠে হামাসের একটি কার্যালয়ে ড্রোন হামলায় দলটির শীর্ষ নেতা সালেহ আল-আরৌরি নিহত হন। যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে হিজবুল্লাহ। তাদের দাবি, ইসরায়েল ওই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসরায়েল হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই এখনো করেনি।
ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে ইসরায়েল ও তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ সন্ত্রাসীদের সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।
বিবিসি জানায়, সালেহ আল-আরৌরি হত্যার প্রতিশোধ নিতে হিজবুল্লাহ শনিবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক ডজন গোলা নিক্ষেপ করেছে।
গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন শনিবার বলেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া এবং একটি ‘অন্তহীন নৃশংসতার চক্র তৈরি হওয়া’ আটকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন:
গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কূটনৈতিক তৎপরতা