রোববারের আগ পর্যন্তও সিনান ওগানের মতো প্রান্তিক এবং অতিজাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ তুরস্কের বাইরে কার্যত অপরিচিতই ছিলেন। কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহ তিনিই হয়ত তুরস্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠবেন। সম্ভবত দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের রাজনৈতিক ভাগ্য তার হাতে।
গত রোববার তুরস্কে পার্লামেন্টারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিনের ভোটের ফলে এরদোয়ান এগিয়ে থাকলেও সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার মতো যথেষ্ট রায় তিনি পাননি।
যে কারণে এখন এরদোয়ান এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিসদারোগলুর মধ্যে রানঅফ ভোট হবে। আগামী ২৮ মে রানঅফ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল (ওয়াইএসকে)এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এরদোয়ান বা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিসদারোগলু কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি।
ভোটের প্রাথমিক যে ফল ওয়াইএসকে প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা গেছে, এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কিলিসদারোগলু ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট নিয়ে ওগান তৃতীয় অবস্থানে। সংখ্যার হিসাবে তিনি খুব সামান্য ভোট পেলেও রানঅফ ভোটে জয়ের পাল্লা যেকোনো প্রার্থীর দিকে ঘুরিয়ে দিতে তা যথেষ্ট।
শক্তিশালী ভূমিকম্প অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার তিন মাস পর তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয় গত রোববার।
সংবাদমাধ্যমগুলো যেটিকে আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে বর্ণনা করছে। সেই নির্বাচনে ‘কিংমেকার’ এখন ওগান।
যদিও ৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক এরদোয়ান বা কিলিসদারোগলু, কাউকেই সমর্থন দিতে আগ্রহী নন।
সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রানঅফে আমাদের সিদ্ধান্ত কী হবে সেটা নিয়ে আমরা আমাদের ভোটারদের সঙ্গে পরামর্শ করবো।
‘‘তবে আমরা এরইমধ্যে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
ইস্তাম্বুলের কক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুরাত সমের বলেন, এরদোয়ান এবং কিলিসদারোগলু উভয়ের কাছেই ওগান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওগানের ভোটারদের বেশিরভাগ অংশ কিলিসদারোগলুর তুলনায় এরদোয়ানের বেশি ঘনিষ্ঠ।
এটাও মনে রাখতে হবে, পার্লামেন্টারি নির্বাচনী ফলে এরই মধ্যে এরদোয়ান এবং তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টিকে এগিয়ে আছে।
সিএনএন-কে এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘‘কিলিসদারোগলুকে এটাও ব্যাখ্যা করতে হবে, একেপি নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টে থেকে তিনি কিভাবে একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন।
‘‘সেইসঙ্গে তাকে ওগানের অনুমোদন পাওয়ার একটি পথও খুঁজে বের করতে হবে, যা একদমই সহজ হবে না।”
বেলজিয়াম ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ থিংকট্যাঙ্ক এর তুর্কী বিশ্লেষক বারকাই মানদিরাসি এক টুইট বার্তায় বলেন, পরিস্থিতি এখন এরদোয়ানের পক্ষে।