ইউক্রেইনে পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র-নেটোর অস্ত্র ‘ইরানে পাঠাচ্ছে রাশিয়া’

অতীতে জব্দ মার্কিন অস্ত্র ও সরঞ্জামের ভিত্তিতে দ্রুতগতিতে নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে তেহরান ব্যাপক সফলতার পরিচয় দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 11:13 AM
Updated : 11 March 2023, 11:13 AM

রাশিয়া ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নেটো ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যেসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম জব্দ করেছে, মস্কো সেসব ইরানে পাঠাচ্ছে আর তেহরান এখন সেগুলোর ওপর ‘রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল’ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের।

বিষয়টি সম্বন্ধে জ্ঞাত চারটি সূত্র সিএনএনকে ওয়াশিংটনের এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে, কোনো একটি যন্ত্রের কৌশল ও উপকরণের খুঁটিনাটি জেনে তার দুর্বলতা বের করা বা একই ধরনের যন্ত্রের অন্য কোনো সংস্করণ বানানোর চেষ্টা করা।    

গত বছর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, নেটো ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্রে একাধিকবার ট্যাংকবিধ্বংসী জ্যাভেলিন ও বিমান বিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো নানা অত্যাধুনিক অস্ত্র রাশিয়ার হাতে পড়তে দেখেছেন।

যুদ্ধের কোনো কোনো পরিস্থিতিতে ইউক্রেইনীয় সেনাদের এসব অস্ত্রশস্ত্র ফেলে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল।

এ ধরনের ঘটনার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাশিয়া সেসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম খুলে দেখতে ও বিশ্লেষণ করতে ইরানে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেন ইরানের সেনাবাহিনী সেগুলো দেখে তাদের নিজস্ব সংস্করণ বানাতে পারে, বলছে সূত্রগুলো। 

জব্দ পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র ধারাবাহিকভাবে ইরানে পাঠানো হলে তা ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন বজায় রাখার ক্ষেত্রে তেহরানকে বড় ধরনের প্রণোদনা দেবে, মস্কো এমনটি মনে করছে বলে ধারণা সূত্রগুলোর।   

তবে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে বিপুল অস্ত্র জব্দ করছে এবং সেগুলো ইরানে পাঠাচ্ছে- এমনটা বিশ্বাস করছেন না মার্কিন কর্মকর্তারা।

যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যেসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম হারাচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে নিয়মিত পেন্টাগনকে অবহিত করা ইউক্রেইনের বাহিনী অভ্যাসে বানিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন তারা।   

অবশ্য সব অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামের খোঁজখবর রাখা যে এখনও বেশ কঠিন তাও তারা স্বীকার করে নিয়েছেন।

ইউক্রেইন বাহিনীর হারানো কোনো অস্ত্রশস্ত্রের রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইরান এরই মধ্যে সফল হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার হওয়া না গেলেও অতীতে জব্দ মার্কিন অস্ত্র ও সরঞ্জামের ভিত্তিতে দ্রুতগতিতে নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে তেহরান ব্যাপক সফলতার পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

ইরানের ভাণ্ডারে থাকা অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ‘তুফান’, ১৯৭০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত বিজিএম-৭১ টিওডব্লিউ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করেই বানানো হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

২০১১ সালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বানানো লকহিড মার্টিন আরকিউ-১৭০ ‘সেন্টিনেল’ ড্রোন হাতিয়ে নিয়ে সেখান থেকে নতুন একটি ড্রোন বানায়, যা ২০১৮ সালে গুলিতে ভূপাতিত হওয়ার আগে ইসরায়েলের আকাশসীমা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিল।

“অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্রের রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিং করার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছিল ইরান। তারা টিওডব্লিউ ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে প্রায় নিখুঁত অনুকরণে তাদের তুফান বানিয়েছে এবং হুতি আর হিজবুল্লাহর কাছে ছড়িয়ে দিয়েছে।

“একই কাজ তারা স্টিংগারের ক্ষেত্রের করতে পারে, যা ওই অঞ্চলের বেসামরিক ও সামরিক সব উড়োজাহাজের জন্যই হুমকি হয়ে উঠতে পারে। রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিং করা জ্যাভেলিন হামাস আর হিজবুল্লাহ ব্যবহার করলে তা ইসরায়েলের মারকাভা ট্যাংকের জন্য হুমকি হতে পারে। ইরানের ছায়া বাহিনীগুলোর হাতে এসব অস্ত্রশস্ত্র গেলে তা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর জন্য বাস্তব হুমকি হয়ে দাঁড়াবে,” বলেছেন সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির মিডল ইস্ট সিকিউরিটি কর্মসূচির পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ ফেলো জনাথন লর্ড।

রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে এই ধরনের লেনদেন তেহরান ও মস্কোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের আরেকটি উদাহরণ। ইউক্রেইনে যুদ্ধে বাইরের সামরিক সহায়তা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠার পর গত বছর থেকে রাশিয়া ইরানের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব বাড়ানোর চেষ্টা জোরদার করেছে।

এই অংশীদারিত্ব যে কেবল ইউক্রেইনকে আরও অস্থিতিশীল করবে তা-ই নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিবেশীদের জন্যু হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে গত মাসে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি।

এ বিষয়ে মন্তব্য পেতে ওয়াশিংটনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস ও ইরানের জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সিএনএন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে কোনো সাড়া পায়নি।

আরও পড়ুন: 

Also Read: ইউক্রেইন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণরত চীন উদ্বিগ্ন মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র, স্যাটেলাইট নিয়ে