আসছে নভেম্বরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। কারাদণ্ডের কারণে নির্বাচনে ইমরান অযোগ্যও ঘোষিত হতে পারেন।
Published : 07 Aug 2023, 03:24 PM
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু প্রথমবার এতে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল এবার তা দেখা যায়নি।
৯ মে প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় বৃহত্তম শহর করাচি পর্যন্ত ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি বহু ভবন ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় সেনা নামাতে হয়েছিল।
কিন্তু ৫ অগাস্ট, শনিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই দিনের রাতটি পাকিস্তানের অন্যান্য রাতের মতোই স্বাভাবিক ছিল।
ইমরান এখন কারাগারে আছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করার মাধ্যমে অর্থ লাভের কথা ঘোষণা না করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তিনি। তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার।
আসছে নভেম্বরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই শাস্তির কারণে নির্বাচনে ইমরান অযোগ্যও ঘোষিত হতে পারেন।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান তার তিন বছরের জেলের সাজা এবং গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। লোকজনকে চুপচাপ ঘরে বসে না থেকে রাস্তায় নেমে শান্তির্পূণভাবে প্রতিবাদ করতে বলেছেন তিনি। কিন্তু তার ডাকে সাড়া মেলেনি, কিন্তু কেন মেলেনি তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ হাজির করেছে বিবিসি।
সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীদের এ নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে তারা জানিয়েছেন, কারণ লোকজন ইমরান খান ও তার দল পিটিআইকে অনুসরণ করতে চায় না, আগের সহিংসতাগুলোর জন্য তারা দলটির সঙ্গে জড়াতে চায় না।
কিন্তু ইমরান খানের সমর্থকরা যে বার্তা দিয়েছেন তার সঙ্গে মন্ত্রীদের এসব কথার মিল নেই।
এক বছরেও বেশি সময় আগে ইমরান খানের সঙ্গে রাজনৈতিকভবে প্রভাবশালী পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।
এই বাহিনীর সহায়তাই ইমরান ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে বিশ্লেষকরা ব্যাপকভাবে মনে করেন। তাদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ইমরান ক্ষমতা হারান।
বলহীন হওয়ার আন্দোলন?
তারপর থেকে চুপচাপ পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা না করে ইমরান সেনাবাহিনীর নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করতে শুরু করেন। তারপর মে মাসে তিনি গ্রেপ্তার হলে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়, এর মধ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় হামলা হয়। সামরিক বাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যাদের তারা দায়ী বলে বিবেচনা করবে তাদের কোনো অনুকম্পা দেখানো হবে না।
এরপর যে ধরপাকড় ও দমনপীড়ন চালানো হয় তাতে ইমরানের দল পিটিআই অনেকটা হীনবল হয়ে পড়ে।
তার হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সামরিক আদালতে সামরিক আইনের অধীনে বিচার করা হবে বলে সামরিক বাহিনী ঘোষণা করে। সামরিক আইন বেসমরিকদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয়, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর এমন হৈচৈ সত্ত্বেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তারা।
পাকিস্তারে কিছু গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে সাংবাদিকদের আর ইমরান খানে নাম উচ্চারণ করার বা তার ছবি প্রদর্শন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে টেলিভিশন স্টেশনের মালিকদের বৈঠকের পর এ বিষয়টি ঘটে। এমনকী টিকারটেইপেও তার নাম লেখা একরকম নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ব্যক্তিগতভাবে ইমরানের পূর্ববর্তী অনেক সরব সমর্থক বিবিসিকে জানান, তারা পিটিআই ও এর নেতাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমে তার খবরও দেখেন না, কারণ কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে কিনা তা নিয়ে ভীত তারা।
পাকিস্তান সরকার বিবিসিকে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে যারা প্রতিবাদ করছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কিন্তু বিবিসির উর্দুর সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে লাহোরের জামান পার্কে ইমরানের বাড়ির সামনে যারা জড়ো হয়েছিলেন পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার হয়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা প্রায় ১০০ জন পিটিআই সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জানান, পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকতে এবং ইমরানের সমর্থকরা যেন জড়ো হওয়া শুরু করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “আমার মনে হয়, কঠোর দমনপীড়নের কারণে ইমরানের সমর্থকরা ভয়ে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি সত্যিই মনে করি, ওই সমর্থক গোষ্ঠী ৯ মে-তে যেমন দেখা গেছে সেরকম কোনো ঝুঁকি নিতে আর ইচ্ছুক ছিল না।
“একভাবে দেখলে সামরিক বাহিনী খেলাটা ঠিকভাবেই খেলেছে। তারা ওই বর্বর কৌশলগুলো ব্যবহার করে আগেই ইমরানের সমর্থক গোষ্ঠীর আরও বৃহত্তর ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে।”
ইমরান খানের আইনজীবী দল পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, তারা তার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করবে।
ইমরানের আগে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন নেতার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে আদালতে মাধ্যমে। গত কয়েক দশকের মধ্যে নওয়াজ শরিফ, বেনজির ভুট্টো ও সামরিক একনায়ক পারভেজ মুশাররফ এর উদাহরণ।
ইমরান নিজে যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনিও তার বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারারুদ্ধ করেছিলেন।
ইমরান যদি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হন, তাহলে তার দলের কী হবে তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে।
এর আগে ইমরান খান বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারেন বা না পারেন পিটিআই টিকে থাকবে আর এগিয়ে যাবে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনাকে অনেক দূরের বলে মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
তোষাখানা মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডের পর গ্রেপ্তার ইমরান খান
ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক ইমরানের
ইমরান খানকে গ্রেপ্তার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়: যুক্তরাষ্ট্র