ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের আভাস, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে যমুনার পানির উচ্চতা কমে আসতে পারে।
Published : 14 Jul 2023, 01:28 PM
টানা বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টসহ রাজধানী দিল্লির বেশকিছু এলাকা ডুবে জনজীবনে ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
দিল্লির পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীর পানি বৃহস্পতিবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছালেও শুক্রবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে কমছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় যমুনার পানি ২০৮ দশমিক ৪৬ মিটার উচ্চতায় ছিল, যা বৃহস্পতিবার রাতে ছিল ২০৮ দশমিক ৬৬ মিটার। কেন্দ্রীয় পানি কমিশন আভাস দিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ১টার মধ্যে পানির উচ্চতা আরও কমে ২০৮ দশমিক ৩০ মিটার হতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পুরাতন রেলওয়ে ব্রিজের কাছে যমুনার পানির উচ্চতা সকাল ৯টায় ২০৮ দশমিক ৪০ মিটার রেকর্ড করা হয়। ঘণ্টার ব্যবধানে আরও খানিকটা কমে সকাল ১০টায় ২০৮ দশমিক ৩৮ মিটার হয়। যমুনার পানি ধীরগতিতে কমতে থাকলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
এদিকে ইন্দ্রপস্থের কাছে দিল্লির সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আইটিও ও রাজঘাট এলাকা এখনও তলিয়ে আছে, যা ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বন্যার পানি শহরের কেন্দ্রীয় অংশ তিলক মার্গের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণেও পৌঁছেছে।
শুক্রবার বিকাশ ভাওয়ানসহ বন্যাকবলিত দিল্লির বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় কুমার সাক্সেনা।
দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, ক্ষতির বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়ে সমস্যা সমাধানে মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
উপচে পড়া যমুনার পানিতে রাজধানীর রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজ, শশ্মান এমনকি পানি শোধনাগারও বন্ধ ঘোষণা করেছে দিল্লি সরকার। রাজধানীর কিছু এলাকায় খাবার পানির সংকট ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ফ্রান্সে সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে দিল্লির বন্যা পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। অমিত শাহ সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে যমুনার পানি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছেন।
দিল্লির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জরুরি কাজে নিযুক্ত নয় এমন সরকারি অফিস ও স্কুল-কলেজ রোববার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে। সিংহুসহ চারটি সীমান্ত থেকে শহরে ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
জুন থেকে শুরু হওয়া এবারের বর্ষা মৌসুমে ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলো রেকর্ড বৃষ্টিপাত দেখেছে। হিমাচল ও পাঞ্জাব রাজ্যেে এ সময়ের গড়ের তুলনায় যথাক্রমে ১০০ ও ৭০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ।
This breach is causing flooding of ITO and surroundings. Engineers have been working whole nite. I have directed the Chief Secretary to seek help of Army/NDRF but this shud be fixed urgently https://t.co/O8R1lLAWXX
— Arvind Kejriwal (@ArvindKejriwal) July 14, 2023
হরিয়ানার মত রাজ্যগুলোতে অস্বাভাবিক বর্ষণের কারণে দিল্লির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার পানি বৃহস্পতিবার রাতে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছায়।
দুই কোটি মানুষের শহর দিল্লি কয়েকদিন আগে ভারি বৃষ্টিপাত দেখেছে, যাতে জলমগ্ন হয়ে পড়া নিচু এলাকাগুলোর শত শত লোককে বাধ্য হয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দুটি রাজ্যের মোট ১৪ জেলা বন্যা দুর্গত হয়েছে। দ্রুত গতিতে ওই এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।
হরিয়ানা সরকারের হিসাবে, বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন পরিস্থিতিতে সেখানে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে হরিয়ানায় ১০ জন এবং পাশের পাঞ্জাবে ১১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।
দিল্লি ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ সুপার সুরেন্দ্রার সিং যাদব জানান, বন্যা পরিস্থিতিতে দিল্লি জুড়ে তারা সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছেন। কাশ্মিরি গেইটের মত এলাকায় পানির স্তর কমতে দেখা গেছে। কিন্তু ওয়াজিরাবাদের দিকে রিং রোড এলাকা এখনও প্লাবিত। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ভৈরন মার্গ খুলে রাখার চেষ্টা করছেন। জাতীয় মহাসড়ক এনএইচ ৪৪-এ যানজট দেখা গেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, জলাবদ্ধতার কারণে গীতা কলোনি থেকে শান্তি ভ্যান পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। দিল্লির সারাই কালে খান টি-জংশনের কাছে এনএইচ-২৪ মহাসড়কেও ব্যাপক যানজট দেখা গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী অতিশি মারলিনা বলেন, “আমাদের টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। এনডিআরএফ ও আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং উইং এর পরিপূর্ণ সহযোগিতা করছে। কিন্তু আমার মনে হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ১০-১২ ঘণ্টা লাগবে।
“গতকাল (বৃহস্পতিবার) যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, সেসব এলাকার সব ড্রেন পরিপূর্ণ। আইটিও থেকে পানি পুরনো দিল্লির ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু রেড ফোর্টের চারপাশে বন্যার কারণে পুরাতন দিল্লির সমস্ত ড্রেন পূর্ণ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, হাতিনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে প্রচুর পানি ঢুকেছে দিল্লিতে, যে কারণে দিল্লিই এখন জলাধারে পরিণত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে দিল্লির সক্ষমতা ও বাঁধগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
দিল্লির এই পরিস্থিতি নিয়ে ‘রাজনীতি করার সময় এখন নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত।
তিনি বলেন, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে হাতিনিকুণ্ড ব্যারেজের পানিপ্রবাহ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।…যদি রাজনীতি আর নিজের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য এই চিঠি লেখা হয়, তবে সেটি খুবই দুঃখজনক।”
আরও পড়ুন-