প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ করছেন জিম্মিদের স্বজনরা।
Published : 22 Jan 2024, 07:11 PM
গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে আরো বেশি কিছু করার দাবি নিয়ে সোমবার জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েন জিম্মিদের স্বজনরা।
তারা নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা উপক্ষে করে জোর করে ঠেলে পার্মলামেন্টের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং চিৎকার করে নিজেদের দাবি জানাতে থাকেন। তাদের কারো কারো হাতে প্ল্যাকার্ড এবং পরনে জিম্মিদের ছবি সম্বলিত কালো টি-শার্ট ছিল। হাতে ছিল জিম্মি স্বজনের ছবি। ঘটনার সময় সেখানে একটি পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠক চলছিল।
স্বজনদের ওই দলটিতে প্রায় ২০ জন ছিলেন। এ ঘটনা জিম্মিদের মুক্ত করে আনা নিয়ে ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ভেতর ক্ষোভ বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দলে থাকা একজন নারী তার পরিবারের তিন সদস্যের ছবি ধরে ছিলেন। যাদের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলার দিন হামাস জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। ওই দিন প্রায় ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন থেকে গাজায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তাদের পাল্টা আক্রমণে এখন পর্যন্ত গাজায় ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
মাঝে গত নভেম্বর মাসে সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে শতাধিক ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। গাজার সশস্ত্র দলটির হাতে আরো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সোমবার জিম্মিদের স্বজনদের পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ার ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়।
সেখানে দেখা যায়, তিন স্বজনের ছবি নিয়ে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়া এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “তিন জনের মধ্যে অন্তত একজনকে আমার কাছে জীবিত ফেরত দিন!”
কালো টি-শার্ট পরা আরেকজন বলেন, “তারা মারা যাচ্ছে আর আপনারা এখানে এভাবে বসে থাকতে পারেন না।
“এখনই তাদের মুক্ত করুন, এখনই, এখনই!”
মধ্যস্থতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশর হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করে আনাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করে গাজার পূর্ণ দখল না নেওয়া পর্যন্ত ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটিতে অভিযান বন্ধ না করার জেদে অটল রয়েছে।
এদিকে, হামাস বলেছে, গাজায় হামলা পুরোপুরি বন্ধ করে ইসরায়েল তাদের প্রতিটি সেনাকে সেখান থেকে সরিয়ে না নিলে এবং ইসরায়েলি কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি না দিয়ে তারা আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে না।
এরইমধ্যে গাজায় ২৭ ইসরায়েলি জিম্মি নিহত হয়েছে। তাদের কেউ কেউ গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানোর সময় নিহত হয়েছেন। এখনো যারা জীবিত আছে তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হয় কিনা তা নিয়ে স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে।
তারা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ করা শুরু করেছে। তেমনই এক বিক্ষোভকারী এলিন স্টিভি। তার ছেলে আইডান হামাসের জিম্মি হয়ে আছে। তিনি বলেন, “জিম্মিরা ফেরত না আসা পর্যন্ত আমরা তাকে ছাড়বো না।”
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপর জিম্মিদের মুক্ত করে আনার দাবি নিয়ে যারা প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভ করতেন তারাও আবার সংগঠিত হতে শুরু করেছেন। তারা এবার আগাম নির্বাচনের দাবি করছেন। যাতে কট্টর ডানপন্থি সরকারকে উৎখাত করা যায়। শনিবার রাতেও হাজার হাজার মানুষ তেল আবিব, হাইফা এবং জেরুজালেমে বিক্ষোভ করেছে।
গাজা যুদ্ধের প্রায় চার মাস হতে চলেছে। এই সময়ে নেতানিয়াহু ও তার সরকারের নেতৃত্বের জনপ্রিয়তা কমার ইঙ্গিত বিভিন্ন জনমত জরিপে উঠে এসেছে।
এদিকে রোববারও নেতানিয়াহু নিজের অবস্থানে অটল থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ অবসানে হামাস যে শর্ত দিয়েছে তা মেনে নেওয়া হবে না।