বেইজিংয়ে সৌদি-ইরান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠক

সম্প্রতি হওয়া চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একে অপরের ভূখণ্ডে দূতাবাস ও কনস্যুলেট ফের চালু করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2023, 11:50 AM
Updated : 6 April 2023, 11:50 AM

কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সাত বছরেরও বেশি সময় পর চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।

চীনের মধ্যস্থতায় গত মাসে মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ও অস্থিরতায় জ্বালানি দেওয়া বৈরিতার বছরগুলো পেছনে ফেলে ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের মধ্যকার কূটনৈতিক মনোমালিন্য নিরসন এবং একে অন্যের ভূখণ্ডে পুনরায় দূতাবাস ‍খুলতে রাজি হয়েছিল।

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দেশ দুটির শীর্ষ দুই কূটনীতিক এই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বৈঠকের আগে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ানে একে অপরকে স্বাগত জানানোর চিত্র দেখা গেছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের সংক্ষিপ্ত এক ফুটেজে।

পরে এক যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশ জানায়, গত মাসে হওয়া চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী দুই মাসের মধ্যে একে অপরের ভূখণ্ডে দূতাবাস ও কনস্যুলেট পুনরায় চালু করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা।

“পুনরায় ফ্লাইট চালু, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের দ্বিপাক্ষিক সফর এবং দুই দেশের নাগরিকদের ভিসা সুবিধাসহ বিস্তৃত সহযোগিতার পথ খতিয়ে দেখার কাজে সমন্বয় করবে টেকনিকাল দলগুলো,” বলেছে দুই দেশ।  

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যস্থতায় মার্চে হওয়া চুক্তিতে সৌদি আরব ও ইরান সাত বছরের কূটনৈতিক বিরোধ পেছনে ফেলে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজি হয়; মধ্যপ্রাচ্যে যে চীনের প্রভাব বেড়েছে, এ চুক্তিকে তার অন্যতম প্রদর্শনী বলা হচ্ছে।

ওই চুক্তির পর গত মাসেই শি টেলিফোনে সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের সঙ্গে একাধিক ইস্যু নিয়ে কথা বলেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরআবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সালের সঙ্গে তার বৃহস্পতিবারের বৈঠক ‘ভালো ও ফলপ্রসূ’ হয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরানের সম্পর্ক স্থাপন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ভালোভাবেই নাড়িয়ে দিয়েছে; কেননা বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রই ওই অঞ্চলে যে কোনো দ্বন্দ্বে প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল।

সৌদি আরব সুপরিচিত এক শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা চালালে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছিল রিয়াদ।

ইরানি কূটনীতিকদের দেশ ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি তেহরানে নিজেদের দূতাবাস থেকেও কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছিল তারা।

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অবশ্য আরও বছরখানেক আগে থেকেই খারাপ হওয়া শুরু হয়েছিল, যখন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। 

ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতিরা ততদিনে দেশটির সৌদি সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী সানার দখলও নিয়ে নেয়।

ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সৌদি আরব তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন শহর ও তেল ক্ষেত্রগুলোতে হুতিরা গত কয়েক বছরে একাধিকবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ইরান-ই হুতিদের অস্ত্র দিচ্ছে বলে রিয়াদ অনেকদিন ধরে অভিযোগও করছিল।

২০১৯ সালে সৌদি আরব তাদের আরামকো কোম্পানির তেল ক্ষেত্রে এক হামলার জন্য ইরানকে সরাসরিই দায়ী করে। সেবারের হামলায় সৌদি আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকের মতো কমেও গিয়েছিল। তবে ইরান ওই হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন:

Also Read: ৭ বছর পর আমিরাতে রাষ্ট্রদূত দিল ইরান