বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
Published : 20 Oct 2023, 10:51 AM
গাজায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্দেশ এক এবং উভয়ই প্রতিবেশীর গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লড়াইয়ে আমেরিকার জনগণকে আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করার আহ্বান জানান।
বলেন, “আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলের মত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সমর্থন করা দরকার।
“এটা একটি স্মার্ট বিনিয়োগ। যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমেরিকানদের জন্য লভ্যাংশ প্রদান করে যাবে।”
যুক্তরাষ্ট্র সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করে বাইডেন আরো বলেন, “এটি ওইসব মুহূর্তগুলোর একটি যেখানে আমরা আজ যে সিদ্ধান্ত নেব তা দশকের পর দশক ধরে আমাদের ভবিষ্যত কেমন হবে তা নির্ধারণ করবে।”
ওভাল অফিস থেকে দেওয়া বাইডেনের এই ভাষণ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণে বাইডেন আমেরিকার জনগণকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, “হামাস এবং পুতিন আলাদা দুটি হুমকি হলেও তাদের উদ্দেশ কিন্তু এক। ইউক্রেইন নামের একটি রাষ্ট্র যে ছিল এবং এখনো আছে, পুতিন সেটি অস্বীকার করছেন।”
সংঘাতপূর্ণ দুটি অঞ্চলেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কীভাবে জড়িত তাও ব্যাখ্যা করেন বাইডেন।
বলেন, “সংঘাতের দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে অনেক দূরত্ব আছে আর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কেন এটি আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কেন ইসরায়েল এবং ইউক্রেইনের বিজয় নিশ্চিত হওয়া দরকার, তা আমি আপনাদেরকে বলতে চাই।
বিশ্বজুড়ে নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সতর্কতা জারি
“আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছি যে, সন্ত্রাসীরা যখন তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য সাজা না পায়, একনায়করা যখন তাদের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সাজা না পায়, তখন তারা আরো সংঘাত, মৃত্যু আর ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
ইউক্রেইনের ক্ষমতা দখলে নিতে পুতিনের যে ‘ক্ষুধা’, সেটি থামাতে যুক্তরাষ্ট্র যদি সহায়তা না করে তাহলে তার আগ্রাসন থামবে না, বরং তা পোল্যান্ড কিংবা পুরো বাল্টিক অঞ্চলে বিস্তৃত হবে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান বাইডেন।
সন্ত্রাসী হামলার জন্য হামাসকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে সংঘাতের হাত থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষা করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
বলেন, “আমেরিকার মিত্ররাই আমেরিকাকে নিরাপদ রাখে। আমেরিকার যে মূল্যবোধ, সেটিই আমাদেরকে অন্যদের কাজের অংশীদার হতে সহায়তা করে। আমরা যদি ইউক্রেইনের থেকে পিছু হটি, ইসরায়েল থেকে পিছু হটি, তাহলে সবই ঝুঁকিতে পড়বে।”
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো। এই যুদ্ধে ইউক্রেইনকে সমরাস্ত্র দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করছে দেশটি।
অন্যদিকে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দীর্ঘদিনের মিত্র ইহুদী রাষ্ট্রটিকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি মার্কিন সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ইসারয়েলকে যুক্তরাষ্ট্র ১৫৮ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক এবং সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এ বছর ইসরায়েলে সামরিক সহায়তার জন্য ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ইসরায়েলের সঙ্গে করা ১০ বছরের একটি চুক্তির অংশ হিসেবে এই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ থেকে২০২৮ সালের মধ্যে ইসরায়েলকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে।
জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউ ফর ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিকে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মানবিক, আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই সামরিক সহায়তা।
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করতে বুধবার আটঘণ্টার ক্লান্তিকর ভ্রমণ করে তেল আবিব গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাইডেন।
তিনি গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য খাবার, পানি ও ওষুধের মত জরুরি মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানোও অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন। বলেন “আমরা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মানবতাকে উপেক্ষা করতে পারি না, যারা কেবল শান্তিতে থাকতে চায় এবং সুযোগ পেতে চায়।”