চীনে তরুণীদের মধ্যে একা থাকার প্রবণতা বাড়ছে

“আপনি খুবই সফল কেউ হন কিংবা সাধারণ কেউ, নির্বিশেষে নারীদেরই এখনও সংসারের জন্য সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।”

রয়টার্স
Published : 7 March 2024, 03:59 PM
Updated : 7 March 2024, 03:59 PM

চীনের অন্য অনেক তরুণীর মত ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার চাই ওয়ানরু মনে করেন বিয়ে একটি অন্যায্য প্রতিষ্ঠান। তাই তিনি বিয়ে করতে চান না। ওয়ানরুর মত তরুণীর সংখ্যা চীনে বাড়ছে। যারা স্বামী এবং সন্তান বিহীন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছেন।

এ বিষয়ে ২৮ বছর বয়সী একজন নারীবাদী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আপনি খুবই সফল কেউ হন কিংবা সাধারণ কেউ, নির্বিশেষে নারীদেরই এখনও সংসারের জন্য সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।

“আগের প্রজন্মের অনেকেই যারা বিয়ে করেছেন, বিশেষ করে নারীরা- তারা সংসাদের জন্য নিজেদেরকে ও নিজেদের ক্যারিয়ারের উন্নতিকে উৎসর্গ করেছেন এবং যে সুখী জীবনের প্রতিশ্রুতি তারা পেয়েছিলেন, সেটাও তারা পাননি। আর আজকালতো আমার নিজের জীবন ভালোভাবে কাটানোই যথেষ্ট কঠিন হয়ে গছে।”

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ছিল। একসময় জনসংখ্যা হ্রাসে দেশটিতে কঠোর ‘এক-সন্তান নীতি’ প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন সে দিন আর নেই। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনবহুল দেশ। গত টানা দুই বছর চীনের মোট জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং জন্মহার ইতিহাসের সবচেয়ে নিম্নতম স্তরে পৌঁছেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশে বয়স্ক মানুষ এবং কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ভারাসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হয় এবং তা দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার স্পষ্ট উদাহরণ চীনের প্রতিবেশী দেশ জাপান।

ভবিষ্যতে জাপানের মত পরিস্থিতিতে পড়া এড়াতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছর ‘বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের একটি নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার’ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংও চলতি বছরের সরকারি কাজের প্রতিবেদনে ‘জন্ম-বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার’ এবং শিশু যত্ন পরিষেবা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির একক পরিবারকে সামাজিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে দেখে। সেখানে অবিবাহিত মায়েদের কলঙ্কিত হিসেবে দেখা হয় এবং বেশিরভাগ সময় সব ধরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

কিন্তু বর্তমানে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ছে, তরুণদের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বেকারত্বের কারণে তারা নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান অর্থনীতি। যে কারণে তরুণরা বিয়ে না করে ‘একক’ জীবন বেছে নিচ্ছেন।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে ২০২১ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে একা থাকাদের সংখ্যা রেকর্ড ২৩ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। ২০২২ সালে চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে বিবাহ নিবন্ধন খানিকটা বেড়েছে। তবে এজন্য মহামারীর কারণে পিছিয়ে দেওয়া বিবাহ নিবন্ধন ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।

২০২১ সালে কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগ ২৯০০ জন শহুরে অবিবাহিত তরুণদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, প্রায় ৪৪ শতাংশ নারীর বিয়ের পরিকল্পনা নেই।

যাইহোক, বিয়েকে এখনও চীনে প্রাপ্তবয়স্কতার একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং মোট প্রাপ্তবয়স্কদের অনুপাতে যারা কখনও বিয়ে করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সংখ্যা এখনও বেশ কম।

যদিও শুধু বিয়ে না করা নয় বরং চীনে জন্মহার হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ অনেকে বিয়ে করতে দেরি করছেন। ২০১০ সালে চীনের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ থেকে ২৫ বছর। ২০২০ সালে গিয়ে চীনারা গড়ে ২৮ থেকে ২৯ বছরে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসছে বলে আদমশুমারির তথ্যে উঠে এসেছে।

সাংহাইতে গত বছর গড় বয়স আরো বেড়ে পুরুষদের ৩০ থেকে ৩১ বছর এবং নারীদের ২৯ থেকে ৩০ বছর ছিল।