রাজপরিবারে থাকাকালে মেগান হুমকি পেয়েছিলেন: ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা

আগের তুলনায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ‘চরম ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের’ দ্রুত উত্থান ঘটছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 02:35 PM
Updated : 30 Nov 2022, 02:35 PM

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে রাজকীয় দায়িত্ব পালনের সময় ডচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কল ‘জঘন্য এবং খুবই বাস্তব’ হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের মেট্রোপলিটন পুলিশের বিদায়ী সহকারী কমিশনার নীল বসু।

যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর নিউজ’কে মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মেগানের প্রাণনাশের হুমকিগুলো এতটাই গুরুতর এবং বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছিল।

ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান ২০২০ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের মত করে বসবাস শুরু করেন।

এই দম্পতি প্রায়ই রাজপরিবার ছাড়ার আগে তারা যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এবং এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে কথা বলেছেন।

২০১৬ সালে মেগান ও হ্যারির সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর স্যোশাল মিডিয়ায় মেগানকে নিয়ে শুরু হওয়া ট্রলের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন প্রিন্স হ্যারি।

যুক্তরাজ্যের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নীল বসু সাক্ষাৎকারে বলেন ‘‘যদি আপনি লেখাগুলো দেখে থাকেন এবং সেগুলো পেতে থাকেন, অনলাইনে আসা বাগাড়ম্বর, আমি কী জানি সেটি যদি আপনি না জানেন, তাহলে আপনি সব সময়ই হুমকি অনুভব করবেন।”

সহকারী পুলিশ কমিশনার হওয়ার আগে নীল বসু ইংল্যান্ডের কাউন্টার-টেরোরিজম পুলিশের প্রধান ছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, চরম ডানপন্থিদের কাছ থেকে মেগানের জন্য সত্যিই কোনও হুমকি ছিল কিনা।

জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই। আমাদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। ওইসব হুমকি দেওয়ার কারণে লোকজনের বিচারও হয়েছে।”

আগের তুলনায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ‘চরম ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের’ দ্রুত উত্থান হচ্ছে বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘‘আমি আগেও জনসম্মুখে এট নিয়ে কথা বলেছি।

‘‘২০১৫ সালে আমি যখন সন্ত্রাস-বিরোধী ইউনটে কাজ শুরু করি তখন আমাদের মোট মামলার ৬ শতাংশ এ (চরম ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ) সংক্রান্ত থাকত। কিন্তু ১৫/১৬ মাস আগে আমি যখন দায়িত্ব ছাড়ি তখন সেটি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।”

নীল বসু যুক্তরাজ্যে অশ্বেতাঙ্গ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পদে রয়েছেন। তিনি রাজপরিবারের সুরক্ষার দায়িত্বেও রয়েছেন। শিগগিরই তিনি সহকারী পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিদায় নেবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নিজে একজন অশ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তাকেও নানা সময়ে বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে বসু আরো বলেন, ‘‘আমি বর্ণ নিয়ে কথা বলি, কারণ বর্ণের কারণে আমাকেও অনেক কিছু দেখতে হয়েছে, কারণ আমি ৫৪ বছর বয়সের একজন মিশ্রবর্ণের মানুষ।”

ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান ২০২০ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যপদ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের মত করে থাকতে শুরু করেন।

যুক্তরাজ্যের রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেগান বলেছিলেন, রাজপরিবারে থাকার সময় তিনি মানসিকভাবে এতটাই চাপ অনুভব করতেন যে তার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হত।

প্রিন্স হ্যারিও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, গত বছর তিনি যখন যুক্তরাজ্য যান তখন সেখানে তিনি নিরাপদ বোধ করেননি।

সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা নীল বসু।তিনি

বলেন, তিনি দেখেছেন মাঝেমধ্যে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও যে ধরনের মন্তব্য করা হয় তা অবর্ণনীয়’।

উদাহরণ হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্যের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সুয়েলা ব্রাভারম্যানের ‘স্বপ্ন’ সরকারি নীতির অধীনে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দিতে দেখা।

তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, এই সময়ে এসে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মুখে এ ধরণের ভাষা শুনতে হবে, অতীতে তাদের পুর্বসূরিরা যে ভাষায় কথা বলতেন এবং যে ভাষা আমার বাবা ১৯৬৮ সাল থেকে মনে গেঁথে রেখেছেন। এটা জঘন্য।”

নীল বসুর এই মন্তব্যের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করেন তার বাহিনী কর্মক্ষেত্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করবে।

‘‘তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন, আমাদের সীমান্তগুলি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার কতটা প্রয়োজন। তিনি এমন একটি আশ্রয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান যেখানে যাদের প্রকৃত প্রয়োজন তাদের জন্য কাজ করা হবে, যেমনটা ব্রিটিশ জনগণের জন্য করা হয়।”