নিরাপত্তারক্ষী এবং বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দ্বীপে পুলিশসহ ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
Published : 23 May 2024, 09:10 PM
ফ্রান্সের অধীনে থাকা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ নিউ ক্যালিডোনিয়া পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। নিরাপত্তারক্ষী এবং বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই ৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাদের মধ্যে দুই পুলিশকর্মীও আছেন।
সেখানকার এই পরিস্থিতিকে বৃহস্পতিবার ‘নজিরবিহীন বিদ্রোহী আন্দোলন’ বলে বর্ণনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
নিউ ক্যালিডোনিয়ার রাজধানী ন্যুমিয়ার পুলিশ সদরদপ্তর পরিদর্শনের সময় এদিন মাক্রোঁ বলেন, সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। তবে প্যারিস শান্তি ফিরিয়ে আনতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে।
বিবিসি জানায়, বিতর্কিত একটি নির্বাচনী সংস্কারকে কেন্দ্র করে দ্বীপটিতে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দুই পুলিশসহ ৬ জন নিহত হওয়া ছাড়াও শত শত বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। চলছে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ।
অস্ট্রেলিয়া এবং ফিজির মধ্যে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে নিউ ক্যালিডোনিয়া। সেখানে এখনও ফরাসি শাসন চলছে। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। তাদের প্রায় ৪০ শতাংশই সেখানকার আদিবাসী কনক সম্প্রদায়ের মানুষ।
এই কনক সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্যারিসের কেন্দ্রীয় সরকারের তুমুল উত্তেজনা চলে আসছে কিছু সময় ধরে। কনক বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, নতুন সংস্কার আইনের ফলে আদিবাসী এই জনগোষ্ঠীর প্রভাব ক্ষুন্ন হবে।
পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন সংস্কার বিলটি ভোটাধিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত। কী আছে এই বিলে? এতে বলা হয়েছে, নিউ ক্যালিডোনিয়ায় যে সব ফরাসি নাগরিক অন্তত ১০ বা তার বেশি সময় ধরে বাস করছেন, তারাই ভোটাধিকার পাবেন। এ বিষয়টি নিয়েই আপত্তি তুলেছেন স্থানীয়রা।
সরকার নিউ ক্যালিডোনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করা হাজার হাজার অনাদিবাসী ফরাসি নাগরিককে ভোটের অধিকার দেওয়ার পরিকল্পনার আওতায় নতুন ওই আইন করেছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, তারা নিউ ক্যালিডোনিয়ার আদি বাসিন্দা। মাত্র ১০ বা তার বেশি বছর ক্যালিডোনিয়াতে কারও বাস করার ভিত্তিতে কেন ভোটাধিকার দেওয়া হবে?
এ প্রশ্ন তুলেই রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। তাদের আশঙ্কা, অনাদিবাসীরা ভোটাধিকার পেয়ে গেলে কনক সম্প্রদায়ের ভোট কমে যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে স্বাধীনতা প্রশ্নে কোনও গণভোট পাস হওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
১৩ মে থেকে দ্বীপটিতে শুরু হয় সহিংসতা। ১৯৮০ সালের পর থেকে এমন সহিংস আন্দোলন আর দেখেনি নিউ ক্যালিডোনিয়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি বৈঠক ডাকা হয় ফ্রান্সের মন্ত্রিসভায়। জরুরি অবস্থা জারি করে প্যারিস। মোতায়েন করা হয় ৩ হাজার সদস্যের শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী।
কিন্তু নিউ ক্যালিডোনিয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। নিউ ক্যালিডোনিয়ায় আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ দ্বীপটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন।
এরপর পরিস্থিতি দেখতে প্যারিস থেকে ২৪ ঘণ্টার ফ্লাইট ন্যুমিয়ায় পৌঁছে বৃহস্পতিবার মাক্রোঁ বলেছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিউ ক্যালিডোনিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে চান। এটাই এখন তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
১৯৯৮ সালের ন্যুমিয়া চুক্তি অনুসারে, ফ্রান্স নিউ ক্যালিডোনিয়াকে অনেক বেশি স্বায়ত্ত্বশাসন দিতে রাজি হয়েছিলেন। একইসঙ্গে সেখানকার তৎকালীন বাসিন্দাদের জন্য প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকারও সীমিত রেখেছিলেন তিনি।
তখন থেকে এখন পর্যন্ত নিউ ক্যালিডোনিয়ায় গেছে ৪০ হাজারেরও বেশি ফরাসি নাগরিক। এর প্রেক্ষাপটেই গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের জাতীয় পরিষদ নিউ ক্যালিডোনিয়ায় বসবাস করা ফরাসি নাগরিকদের জন্য ভোটাধিকার মঞ্জুরে নতুন আইনের প্রস্তাব করে।