নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ে ইইউর সঙ্গে নতুন চুক্তিতে সুনাক

ওই চুক্তি লন্ডনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে আশা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর।

রয়টার্স
Published : 27 Feb 2023, 05:33 PM
Updated : 27 Feb 2023, 05:33 PM

ব্রেক্সিটের পর নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলাদা একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

যে চুক্তি লন্ডনের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরুর পথ প্রস্তুত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সোমবার পশ্চিম লন্ডনের একটি হোটেলে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুরা ফন ডার লিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সুনাক।

বৈঠক শেষে উইন্ডসরে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলেন সুনাক এবং ফন ডার লিন।

সেখানে সুনাক বলেন, উভয় পক্ষ ব্রিটিশ প্রদেশের (নর্দান আয়ারল্যান্ড) বাণিজ্য নিয়ম সহজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। সেইসঙ্গে তারা কী নিয়ম অনুসরণ করবে তা ঠিক করার আরো বেশি ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে।

‘‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা বড় ধরণের আগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি। এটা আমাদের সম্পর্কের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা।”

আয়ারল্যান্ড আলাদা একটি রাষ্ট্র হলেও নর্দান আয়ারল্যান্ড এখনো যুক্তরাজ্যের অংশ। আয়ারল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যে নিবিড় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই অঞ্চলের মধ্যে কোনো সীমান্ত নেই (ওপেন বর্ডার)। যুক্তরাজ্য ইইউর সদস্য থাকা অবস্থায় একক বাণিজ্য নীতির ‍কারণে কোনো সমস্যা ছিল না।

কিন্তু ব্রেক্সিটের পর অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এখন আয়ারল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

আয়ারল্যান্ড ইইউর সদস্য হওয়ায় একক বাণিজ্য নীতি মেনে চলে।

ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয় বড় ধরণের প্রশ্ন উঠেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য বাণিজ্য নীতি কী হবে এবং দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারিত হবে কি না।

সীমান্ত নির্ধারিত হলে সেটা আবার ১৯৯৮ সালের যে শান্তি চুক্তি নর্দান আয়ারল্যান্ডে দীর্ঘ তিন দশকের সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান ঘটিয়েছিল সেটিকে বিপন্ন করবে।

নর্দান আয়াল্যান্ড বিষয়ে ইইউর সঙ্গে নতুন চুক্তিতে উপনীত হতে পারা প্রধানমন্ত্রী সুনাকের জন্য বড় অর্জন হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

যদিও চার মাস আগে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসা সুনাক ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে সম্পর্ক আরো উন্নত করতে আগ্রহী বলে মনে করছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যদিও নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ে ইইউর সঙ্গে নতুন চুক্তি তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টিই ব্রেক্সিটের পক্ষে বেশি প্রচার চালিয়েছে।

এখন ইইউর সঙ্গে সমঝোতার সম্পর্ক তার দলের এমপিদের পছন্দ নাও হতে পারে।

এই চুক্তির সাফল্য অবশ্য ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে (ডিইউপি) নর্দান আয়ারল্যান্ডের ক্ষমতা ভাগাভাগি ব্যবস্থা বয়কটের অবসান ঘটাতে রাজি করতে পারবে কিনা তার উপর নির্ভর করবে। যা ১৯৯৮ সালের শান্তি চুক্তির মূল বক্তব্য ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ফন ডার লিন এই চুক্তির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের সব পক্ষের জন্য শান্তির আশা প্রকাশ করেন৷ তার মতে, নতুন এই ব্যবস্থা উভয় পক্ষের বাজারের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

যদিও এ ব্যবস্থা নর্দান আয়ারল্যান্ডে অচলাবস্থা কাটাতে পারে কি না এবং যুক্তরাজ্যেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷

যুক্তরাজ্যে বর্তমানে নানা সংকটের কারণে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি৷ জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টি অনেক এগিয়ে রয়েছে৷

ব্রেক্সিট চুক্তির সংশোধনকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে সেই ব্যবধান কমাতে চান প্রধানমন্ত্রী৷ তবে ইইউর সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কিছু বাস্তব সমস্যা দূর হলেও নর্দান আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য-পন্থি ডিইউপি পার্টি আবার ক্ষমতা বণ্টনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷

ব্রেক্সিট চুক্তি অনুযায়ী নর্দান আয়ারল্যান্ড কার্যত ইইউর একক বাজারের অংশ থেকে যাওয়ায় এবং যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ব্যবধান দূর না হওয়ায় ডিইউপির ক্ষোভ থেকে যাচ্ছে।

২০১৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে রায় দেবার পর থেকে কনজারভেটি দলের মধ্যে তীব্র বিভাজন সরকারের কাজকর্মে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে আসছে৷