রাতে দ্বিতীয় ঘটনায় ইসরায়েলের পুলিশ আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে মুসুল্লিদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
Published : 06 Apr 2023, 12:51 PM
ইসরায়েলি পুলিশ জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে একইদিনে দ্বিতীয়বারের মতো ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে।
বুধবার রাতের এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ভোররাতে প্রথম আল আকসা প্রাঙ্গণে থাকা মুসুল্লিদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি পুলিশ। তখন ইসরায়েলি পুলিশের পিটুনি ও রবার বুলেটে ১২ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছিল।
ভোরে মসজিদ প্রঙ্গণ থেকে সাড়ে তিনশজনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান সত্ত্বেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস ও ইহুদিদের নিস্তার পর্বের প্রক্কালে এই সংঘর্ষ গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি রকেট ও বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণের কারণ হয়, যা সহিংসতায় আরও ইন্ধন যোগাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাতে দ্বিতীয় ঘটনার সময় ইসরায়েলের পুলিশ আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে মুসুল্লিদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, এ সময় তারা স্টান গ্রেনেড ও বরাব বুলেট ব্যবহার করে বলে জর্ডানের নিয়োগ করা ইসলামি ওয়াকফের কর্মীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের হামলার প্রতিক্রিয়ায় মুসুল্লিরা পাথর নিক্ষেপ করে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৬ ফিলিস্তিনি আাহত হয়।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, বহু তরুণ মসজিদটির ভেতরে পাথর ও পটকা নিয়ে অবস্থান নেয়। আর ওয়াকফ জানিয়েছে, নামাজ শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, “আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযান, মুসুল্লিদের ওপর তাদের হামলা, রমজান মাসে পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের মুখে চপেটাঘাত।”
একইদিন ভোররাতে পুলিশ তাদের কথিত মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেওয়া মুখোশপরা আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। পুলিশের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে ওই আন্দোলনকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অভিযান চালিয়েছে তারা।
এ সময় পুলিশের পিটুনি ও রবার বুলেটে ১২ ফিলিস্তিনি আহত হয় বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট। অপরদিকে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তাদের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি আল আকসা মসজিদের এ সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয়পক্ষের প্রতি উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আল আকসায় প্রথম সহিংসতার পর গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে নয়টি রকেট ছোড়ে। এর জবাবে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের অস্ত্র উৎপাদন স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
গাজা সীমান্তের উভয়পাশে পাল্টাপাল্টি এসব হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে বলে খবর হয়নি। হামাস রকেট হামলার দায় স্বীকার না করলেও বলেছে, এগুলো আল আকসায় চালানো অভিযানের জবাব। এর আগে ২০২১ সালে এ ধরনের রকেট হামলাকে কেন্দ্র করে গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে বেঁধে যাওয়া যুদ্ধ ১০ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
আল আকসায় দ্বিতীয়বার সহিংসতা হওয়ার একটু আগে গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে আরও দুটি রকেট ছোড়া হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, একটি বেশি দূর যেতে পারেনি আর অপরটি ইসরায়েলের ভেতরে খোলা জায়গায় পড়ে বিস্ফোরিত হয়।
এর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেছিলেন, “উত্তেজনা বাড়ানোর আগ্রহ নেই আমাদের কিন্তু যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি আছি।”
জেরুজালেমের পুরনো শহরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণের কাছে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি সীমান্ত পুলিশ। এই প্রাঙ্গণটি ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত যা ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
আরও পড়ুন: