Published : 29 Apr 2025, 11:40 PM
ভারতের সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির এক মন্ত্রী একথা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের আইন ও বিচার মন্ত্রী আকিল মালিক সোমবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসলামাবাদ এই বিষয়ে অন্তত তিনটি বিকল্প আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সিন্ধু পানিবন্টন চুক্তি করার ক্ষেত্রে যাদের বড় ভূমিকা ছিল, সেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকতে পারেন তারা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে হেগ এর আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে ইসলামাবাদ।
আন্তর্জাতিক আদালতে তারা ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করতে পারেন যে, সিন্ধুর পানি আটকে নয়াদিল্লি ১৯৬০ সালের ভিয়েনা চুক্তির বিধিভঙ্গ করছে।
গত সপ্তাহে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় পর্যটক হতাহতের ঘটনার জেরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার।
এসব পদক্ষেপের মধ্যে ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সই হওয়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পাকিস্তান এর বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটছে।
পাকিস্তানের আইন ও বিচারমন্ত্রী আকিল মালিক বলেছেন, “আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মালিক অবশ্য চতুর্থ আরেকটি কূটনৈতিক বিকল্প মাথায় রাখার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলার কথাও ভাবছে।
সব বিকল্পই হাতে আছে এবং সবখানেই যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে জানিয়ে মালিক বলেন, “সিন্ধু পানিবন্টন চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা যায় না। সাময়িকভাবেও স্থগিত করা যায় না। চুক্তিতে এমন কোনও বিধান নেই।”
ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পাল্টা কোনও কথা বলা হয়নি।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় টানা ৯ বছর আলোচনার পর ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সই হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি।
বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সই হওয়া ওই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) পানির ওপর পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব রাখা হয়েছিল।
ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র পানি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই পানি ব্যবহার করলেও কোনোভাবেই পানির প্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না।
কিন্তু ভারত চুক্তি স্থগিত রাখায় পাকিস্তানের পঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে সেচ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের কৃষিতে। কারণ, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলোর পানির ওপর দেশটির ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল।