সন্দেহভাজন ওই গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ না দিয়ে কীভাবে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে শুনানিতে সে প্রশ্নও তোলেন বিচারক।
Published : 25 Mar 2025, 02:51 PM
ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত গ্যাং ‘ত্রেন দে আরাগুয়ার’ সদস্য অ্যাখ্যা দিয়ে যাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাদের চেয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরাও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভালো আচরণ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন আপিল আদালতের এক বিচারক।
ওয়াশিংটন ডিসির আপিল আদালতে সন্দেহভাজন ২৩৮ গ্যাং সদস্যকে এল সালভাদরের কারাগারে পাঠাতে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ১৭৯৮ সালের যে বহিঃশত্রু আইন ব্যবহার করেছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে মামলার শুনানি চলছে।
সোমবার সেখানেই বিচারক প্যাট্রিশা মিলিট এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সন্দেহভাজন ওই গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ না দিয়ে কীভাবে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে শুনানিতে সে প্রশ্নও তোলেন বিচারক।
“বিমান বোঝাই করে লোকজন নেওয়া হয়েছে। এখানে যা হয়েছে, বহিঃশত্রু আইনে নাৎসিরাও এর চেয়েও ভালো আচরণ পেয়েছে,” বলেছেন তিনি।
এ আইনের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অনেককে বহিষ্কারে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে গত সপ্তাহে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন ফেডারেল বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ। এ স্থগিতাদেশ তোলার অনুরোধে সোমবারও তাকে রাজি করানো যায়নি।
বোয়াসবার্গ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া এ ব্যক্তিদের গ্যাং সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, এবং তাদেরকে অবশ্যই বহিষ্কারাদেশকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
গত ১৫ মার্চ ট্রাম্প বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার অপরাধীদের গ্যাং ত্রেন দে আরাগুয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মিত যুদ্ধ’ চালাচ্ছে। ১৯৭৮ সালের বহিঃশত্রু আইন ব্যবহারে তিনি এই যুক্তিকেই কাজে লাগাতে চাইছেন।
সেদিনই সন্ধ্যায় বিচারক যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন ‘গ্যাং সদস্যদের’ বিতাড়নে ১৪ দিনের স্থগিতাদেশ দেন। বহিষ্কৃতদের নিয়ে যেসব ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা দিয়েছে সেগুলোকে ফেরত আনতেও মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন তিনি।
পরে হোয়াইট হাউজ জানায়, বিচারক যতক্ষণে ওই আদেশ দিয়েছেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল, বিমানগুলো আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
সোমবারের শুনানিতে সরকারি আইনজীবীরা ১৫ মার্চের বোয়াসবার্গের স্থগিতাদেশ বদলাতে চেয়েছিলেন।
আইনজীবীদের একজন ড্রিউ এনসাইন ওই সাময়িক স্থগিতাদেশকে ‘পুরোপুরি নজিরবিহীন’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
বিচারক মিলিটের নাৎসিদের জড়িয়ে দেওয়া যুক্তিরও তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
প্রত্যুত্তরে মিলিট বলেন, “অবশ্যই এটা নজিরবিহীন, কেননা কোনো প্রেসিডেন্টই এই আইন ব্যবহার করেননি।”
“ত্রেন দে আরাগুয়ার সদস্য মনে করে আপনারা আমাকেও শনিবার তুলে নিয়ে বিমানে উঠিয়ে দিতে পারতেন, এবং এর বিরুদ্ধে আমাকে প্রতিবাদ করারও সুযোগ দিতেন না,” বলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে নিয়োগ পাওয়া মিলিট।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া আগে ভেনেজুয়েলার ওই নাগরিকরা আদতেই গ্যাং সদস্য কিনা ট্রাম্প প্রশাসন তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখেনি বলেও অনুমান এই বিচারকের।
সোমবার পরের দিকে সীমান্ত বিষয়ক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা টম হোম্যান নাৎসিদের জড়িয়ে ফেডারেল বিচারকের করা মন্তব্যকে ‘ন্যাক্কারজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিবিএস