বিমান হামলায় সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর নিষিদ্ধ গুচ্ছ বোমা হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা।
Published : 21 Dec 2023, 06:32 PM
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে এবং জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিষিদ্ধ গুচ্ছ বোমা জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ খতিয়ে দেখতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সময়েই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্য এবং পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের সেনা ফাঁড়িগুলোতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোটের সমন্বিত হামলার মুখে পড়ছে সামরিক বাহিনী।
শান রাজ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকের বিমান হামলায় জান্তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ গুচ্ছ বোমা হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির অস্ত্র তদন্তকারীদের বিশ্লেষণে এই বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে ওই অভিযোগ করে সংস্থাটি।
তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ এর এর একটি গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) বলেছেে, ওই বিমান হামলায় একজন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।
১০ জন বেসামরিক নাগরিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, রাখাইন রাজ্যের পাউক তাও-তে সাধারণ মানুষরা লুটপাট, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাট ওয়েলস বলেছেন, “বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিধ্বংসী পরিণতি ডেকে আনে এমন নির্বিচার হামলা চালানোর রক্তক্ষয়ী ইতিহাস মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আছে। আর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বড় ধরনের হামলার যে নৃশংস জবাব সেনাবাহিনী দিচ্ছে, সেটিও তারা করছে তাদের দীর্ঘদিনের নির্দিষ্ট ধাঁচেই।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারেনি এবং এ বিষয়ে মিয়ানমার জান্তার মুখপাত্র জ মিন তুনের কোনও মন্তব্য পায়নি। জ মিন তুন এর আগে ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী বৈধ অভিযান চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং এ অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার অভিযোগও অস্বীকার করেছিলেন।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত অক্টোবরের শেষ দিকে মিয়ানমারের লড়াই শুরুর পর ৩ লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে। আর সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ।
সামরিক বাহিনীর নির্বিচার দমনাভিযানের কারণে মিয়ানমারে প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার হচ্ছে এবং জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের মাত্রাও বাড়ছে।
গত সপ্তাহে চীন বলেছে, তারা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করেছে। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট বলেছে তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তার আগেই মিয়ানমারের বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ এক বিবৃতি দিয়ে বলেছিল যে, সেনাবাহিনী নিয়মিতই বেসামরিক নাগরিকদেরকে হুমকি দিচ্ছে। তাদেরকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করছে, মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং নির্যাতন করছে।