যুদ্ধবিরতি শেষের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১০৯ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
Published : 01 Dec 2023, 08:06 PM
গাজায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো নিয়ে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর শুক্রবার বিমান থেকে ইসরায়েলের তুমুল বিমান হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার ভোরে পর যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষের সঙ্গে সঙ্গেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের পূর্বের এলাকাগুলোতে ঘন ঘন বোমা হামলা হয়েছে।
রয়টার্স বার্তা সংস্থার সাংবাদিকরা বোমা হামলার পর আকাশে কালো ধোঁয়া দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। হামলা থেকে বাঁচতে তলপি তলপা নিয়ে অধিবাসীরা রাস্তায় নেমেছে। আরও পশ্চিমে সরে গিয়ে আশ্রয় পেতে চাইছে তারা।
গাজার উত্তরেও ধ্বংসস্তুপের ওপর ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সে ধোঁয়া দেখা গেছে ইসরায়েলের সীমান্ত বেষ্টনীর ওপার থেকেও। ভেসে আসছে গুলি বিস্ফোরণের শব্দ।
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট ছুড়ে হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষের কয়েকঘন্টা পরই অন্তত আটটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১০৯ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে।
চিকিৎসাকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এবং রাফায় সবচেয়ে বেশি বোমা হামলা হয়েছে। যেখানে উত্তর গাজার লড়াই থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে শত শত, হাজার হাজার অধিবাসী।
ইসরায়েলের হামলার কবলে পড়েছে গাজার কেন্দ্রস্থল এবং উত্তরের কিছু এলাকাও। আরও দক্ষিণের রাফাহ এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শিশু আহত হয়েছে।
কাছাকাছি আবু ইউসেফ আল-নাজ্জার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বেশ কয়েকজন আহত পুরুষ ও বালক। ইসরায়েল এর আগে উত্তর গাজায় অভিযান চালাচ্ছিল।
এবার দক্ষিণেও ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে গাজার অধিবাসীরা এই ভেবে আতঙ্কিত যে, ইসরায়েল আগে যে এলাকাগুলোকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেছিল সেখানেও এখন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দক্ষিণ গাজার প্রধান খান ইউনিস নগরীর পূর্বের এলাকাগুলোতে ইসরায়েল লিফলেট ফেলে অধিবাসীদেরকে চারটি শহর থেকে সরে যেতে বলেছে। বাসিন্দাদেরকে গাজার দক্ষিণে মিশর সীমান্তের রাফাহ শহরের দিকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ায় গাজায় চরম মানবিক জরুরি পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। ‘গাজায় আবারও দুনিয়ার জাহান্নাম নেমে এসেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জেনিভায় জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ কার্যালয়ের মুখপাত্র জেন্স লার্কে।
গত ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা সবাইকে হতবাক করে দেয় এবং সাধারণ ইসরায়েলিরা হতভম্ব হয়ে পড়ে।
সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ওই দিন প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে রাখে হামাস।
হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রায় সবদিক থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলা হামলায় ১৪ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী ফিলিস্তিনি নিহত হয়, এদের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।