ভারতের নির্বাচনে কারাগার থেকে ২ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সংসদে যেতে হলে বিশাল নিরাপত্তাবাহিনীকে তাদের সঙ্গে যেতে হবে।
Published : 06 Jun 2024, 05:10 PM
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। নবনির্বাচিত এই কারাবন্দী সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে দেওয়া হবে কি না এখন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আইন তাদের নতুন সংসদের কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দেবে, কিন্তু ভারতীয় সংবিধান তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার অধিকার দিয়েছে।
মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা গেছে, পাঞ্জাবের খাদুর সাহেব আসন থেকে জয়ী হয়েছেন কট্টরপন্থী শিখ প্রচারক অমৃতপাল সিং এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা আসন থেকে জয়ী হয়েছেন সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে অভিযুক্ত শেখ আব্দুল রশিদ, যিনি ইঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে সুপরিচিত।
ইঞ্জিনিয়ার রশিদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৯ আগস্ট, ২০১৯ থেকে তিহার জেলে বন্দী আছেন। আর ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেফতারের পর অমৃতপাল সিংকে অসামের ডিব্রুগড় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল রশীদ কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারিয়েছেন কাশ্মীরের হেভিওয়েট প্রার্থী ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে। দুই লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা লাগা অমৃতপাল সিং খাদুর সাহেব কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
কারাবন্দি দুই প্রার্থীই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন, এটি স্পষ্ট।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কারাবন্দি নবনির্বাচিত এই দুই সংসদ সদস্যকে শপথ নিতে দেওয়া হবে কি না; উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে কীভাবে তারা শপথ নেবেন।
এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আইনি বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং লোকসভার সাবেক মহাসচিব পিডিটি আচারি এ ধরনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধানগুলি অনুসরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া সাংবিধানিক অধিকার।
কিন্তু, যেহেতু তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, তাই ইঞ্জিনিয়ার রশিদ এবং অমৃতপাল সিংকে অবশ্যই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইতে হবে। আর শপথ নেওয়ার পর তাদের আবারও কারাগারে ফিরতে হবে।
আইনি জটিলতা আরও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আচারি সংবিধানের ১০১(৪) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দেন, যেখানে সভাপতির পূর্বানুমোদন ছাড়া সংসদের উভয় কক্ষে সাংসদের অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, শপথ নেওয়ার পর তারা স্পিকারকে চিঠি লিখে সংসদে উপস্থিত হতে না পারার কথা জানাবেন। এরপরে স্পিকার তাদের অনুরোধগুলি সদস্যদের অনুপস্থিতি সম্পর্কিত হাউস কমিটির কাছে প্রেরণ করবেন।
ওই সদস্যকে সংসদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকতে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করবে। এরপরে সুপারিশটি স্পিকারের মাধ্যমে হাউজে ভোটের জন্য রাখা হবে।
যদি ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বা অমৃতপাল সিংকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ন্যূনতম দু'বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তবে ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে তারা অবিলম্বে লোকসভায় তাদের আসন হারাবেন; যেখানে বলা হয়েছে যে এই জাতীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাংসদ এবং বিধায়কদের অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারা বাতিল হয়ে যায়, যা এর আগে দোষী সাব্যস্ত সাংসদ ও বিধায়কদের দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তিন মাস সময় বরাদ্দ করেছিল।