এই নির্বাচন সিঙ্গাপুরের নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং-এর জন্য প্রথম পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
Published : 15 Apr 2025, 07:04 PM
সিঙ্গাপুরে আগামী ৩ মে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং-এর জন্য প্রথম পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মাত্র নয় দিনের নির্বাচনী প্রচারের মূল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি, আবাসন চাহিদা, কর্মসংস্থান এবং বুড়িয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য বাড়তে থাকা স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা।
১৯৫৯ সালে সিঙ্গাপুর স্ব-শাসন লাভ করে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা ক্ষমতাসীন পিপল’স অ্যাকশন পার্টিকেই (পিএপি) ভোটাররা এবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০২০ সালে সিঙ্গাপুরের সর্বশেষ নির্বাচনে দেখা গেছে, বিরোধীদল ‘ওয়ার্কাস পার্টি’ ১০ টি আসনে জয় পেয়ে ইতিহাস গড়ে। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পর এটিই ছিল বিরোধীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
এবারের নির্বাচনে ৯৭ টি আসনের জন্য লড়াই হবে। এর আগে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল পিএপি ৯৩ আসনের ভেতর ৮৩ টি আসনে জয় পেলেও সেই ফলকে আংশিক ধাক্কা হিসেবেই বিবেচনা করে দলটি। ফলে এবারের নির্বাচনে আরও শক্তিশালী জয়ের লক্ষ্যে তারা মাঠে নামবে এতে কোনও সন্দেহ নেই।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে অংশ নেওয়া ১,৮৪৫ জন সিংগাপুরের নাগরিকের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কাকে ভোট দেবেন তা ইতমধ্যেই ঠিক করেছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই ভোট দেবেন পিএপিকে, আর ১৫ শতাংশ ভোট দেবেন প্রধান বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি কে।
গত বছর দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের জায়গায় দায়িত্ব নেওয়া লরেন্স ওয়ংয়ের জন্য এটি হবে প্রথম বড় নির্বাচনী পরীক্ষা।
ফেব্রুয়ারিতে নিজের প্রথম বাজেট পেশ করে তিনি যেসব করছাড়, নগদ সহায়তা এবং খাতভিত্তিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন, অনেকেই তা দেখছেন নির্বাচনের আগে ভোটারদের খুশি রাখতে ‘ফিল-গুড বাজেট’ হিসেবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র চারজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। তাদের সবাই পিএপি’র। প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লি কুয়ান ইউ, যাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার বলা হয়। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ ২৫ বছর।
২০১৫ সালে প্রয়াত লি কুয়ান ইউ-এর ছেলে লি সিয়েন লুং ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দায়িত্ব ছাড়েন।
সিঙ্গাপুরে ২৭ লাখ ৫০ হাজার যোগ্য ভোটারের জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশটিতে যুক্তরাজ্যের মত ‘ফার্স্ট-পাস-দ্য-পোস্ট’ এর মত ভোট দানের নিয়ম থাকলেও, সেখানে বিরোধীদের জন্য কিছু বাড়তি চ্যালেঞ্জ আছে।
এমপিরা যে নির্বাচনি আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সেগুলো আয়তনে ছোট-বড় হয়ে থাকে এবং বড় আসনে কোনও একজন নয় বরং একাধিক এমপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের সংখ্যা ৫ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই দলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বলা হয় ‘গ্রুপ রিপ্রেজেন্টেটিভ কনস্টিটুয়েন্সিস’ বা জিআরসি।
১৯৮৮ সালে চালু হওয়া এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনা সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলগুলো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রার্থী না পাওয়ায় এসব বড় আসনে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি।
একজন প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ১৩,৫০০ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ৯ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার) জামানত দিতে হয়, যা ফিরে পেতে হলে তাকে মোট ভোটের এক-অষ্টমাংশের বেশি ভোট পেতে হয়।