তেহরানের দাবি, তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে দেশটির বিমান ঘাঁটি ও রাডার সিস্টেমগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে।
Published : 02 Oct 2024, 02:56 PM
ইসরায়েলের বিমানবন্দর ও ডিমোনা এলাকার পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর কৌশলগত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশকে আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হলেও এটিকে সংঘাতের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচনা করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) মধ্যে নিবিড় সমন্বয়কেই ইরানের হামলা ব্যর্থ করে দেওয়ার কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ হামলায় অল্প কয়েকজন আহত হওয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি ইসরায়েলের।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালাল ইরান। তেহরানের দাবি, তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে দেশটির বিমান ঘাঁটি ও রাডার সিস্টেমগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে।
ইসরায়েলের বহুদর্শী যুদ্ধ সাংবাদিক রন বেন-ইশাই ওয়াইনেট নিউজে এক মতামত কলামে লিখেছেন, ইরান এখন গাজা, লেবাবন ও পশ্চিম তীরের মতো ইসরায়েলের এক প্রাথমিক মনোযোগ পরিণত হয়েছে। প্রায় এক টন ওজনের বোমা যুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যস্থল করার পাশাপাশি ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ইরান। তাই ইসরায়েলকে অবশ্যই তাদের প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করতে হবে।
ইরানের নেতৃবৃন্দও সম্ভবত ইসরায়েলের পাল্টা হামলার অপেক্ষায় সতর্কভাবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা তৈরি করছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানের আঞ্চলিক প্রতিরোধ অক্ষের ছায়া বাহিনীগুলো অনেকটা দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েল হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহর শীষর্ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও লেবাননে ইরানের রেভল্যুশনারি গাড কোরের (আইআরজিসি) এক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করে ইরানের অবস্থান আগের চেয়ে দুর্বল করে তুলেছে।
রোববার ইসরায়েল ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হোদেইদাহ বন্দরে হামলা চালিয়েছে। এই আক্রমণ ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা বা তেল অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্যস্থল করতে পারে।
কিন্তু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে তা একইসঙ্গে ইসরায়েল ও মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের কোনো হামলা চালানো হলে তা পুরো মাত্রার যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে আর তাতে ইরান তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে উঠেপরে লাগতে পারে।
ইরানের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। এসব স্থাপনায় হামলা চালালে ইরান নিশ্চিতভাবে হরমুজ প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ জলপথ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। যার অনিবার্য প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতি এড়াতে পারবে না।
মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে আর ইসরায়েলকে এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ইরানে হামলার আওতা বিবেচনা করতে হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এ কারণে ওয়াশিংটন যেটিকে উপযুক্ত, বৈধ ও কম ঝুঁকিমুক্ত বলে বিবেচনা করবে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সম্ভবত তেমন লক্ষ্যই বেছে নিতে হবে। লেবানন ও অন্য যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য এই অধ্যায়টি শেষ করার মধ্যেই ইসরায়েলের বৃহত্তম স্বার্থ নিহিত বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন:
ইরান ইসরায়েলে আক্রমণ শেষের ঘোষণা দিলেও বাড়ছে যুদ্ধের শঙ্কা
ইসরায়েলে এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, প্রতিশোধের হুমকি ইসরায়েলের