পেশোয়ারে মসজিদে হামলা: বোমাবাজ ঢুকেছিল পুলিশের পোশাকেই

হামলায় ১০-১২ কেজি টিএনটি ব্যবহার করা হয়েছে; মসজিদ ভবনটি পুরনো হওয়ায়ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 10:45 AM
Updated : 2 Feb 2023, 10:45 AM

পেশোয়ারে পুলিশ লাইনস এলাকার মধ্যে একটি মসজিদে আত্মঘাতী হামলার পেছনে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ধরার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার দাবি করে খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি বলেছেন, হামলাকারী সেদিন পুলিশের পোশাক পরেই ভেতরে ঢুকেছিল। 

সোমবার শক্তিশালী এক বিস্ফোরণ পেশোয়ারের ওই সুরক্ষিত অঞ্চলটির ভেতরে অবস্থিত মসজিদটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়, সেখানে তখন নামাজ পড়তে তিন থেকে চারশ লোক জড়ো হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পুলিশের কর্মকর্তা।

ভয়াবহ ওই হামলায় অন্তত ১০১ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।

বেআইনি ঘোষিত তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) প্রথমে এই হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা তা অস্বীকার করে বলে জানিয়েছে ডন।

একাধিক সূত্রের ইঙ্গিত, হামলার পেছনে টিটিপির স্থানীয় কোনো উপদলের হাত থাকতে পারে।

হামলা নিয়ে চলমান তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিককের সামনে আসেন আনসারি।

পুলিশ সদস্যদেরকে সন্তানের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, পুলিশ বিস্ফোরণস্থল থেকে বোমা হামলায় ব্যবহৃত সুইসাইড ভেস্টের বল বিয়ারিং খুঁজে পেয়েছে। 

“আত্মঘাতী এক হামলাকারী ছিল, আমরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছি। খাইবার রোড থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত তার যাতায়াতের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি পরে পুলিশ লাইনসের ভেতরে ঢুকে তার মোটরসাইকেল এক পাশে পার্ক করে রাখেন। তার পরনে ছিল পুলিশের উর্দি, মুখে মাস্ক আর হেলমেটও ছিল তার,” বলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

বিস্ফেরণস্থল থেকে পুলিশ যে কাটা মাথাটি পেয়েছে সেটি হামলাকারীর, বলেছেন তিনি।

“প্রবেশপথে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে চেক করেনি, ভেবেছিল সে তো আমাদেরই লোক। দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটের দিকে তিনি মোটরসাইকেলে করে মূল ফটক দিয়ে পুলিশ লাইনসের ভেতরে ঢুকেন। এরপর তিনি এক কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেন এবং মসজিদটি কোথায় তা জানতে চান।

“এর অর্থ হচ্ছে, তিনি এলাকাটি চিনতেন না, তাকে একটি টার্গেট দেওয়া হয়েছিল, তার পেছনে ছিল পুরো নেটওয়ার্ক, সে একা কাজ করেনি,” বলেছেন আনসারি।

পুলিশ এরইমধ্যে হামলাকারীর মোটর সাইকেলের খোঁজও বের করে ফেলেছে।

“তদন্ত এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে সময় লাগে, আমরা যত্নসহকারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এর জন্য বেশ ধৈর্য দরকার,” বলেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, হামলায় ১০-১২ কেজি টিএনটি ব্যবহার করা হয়েছে; এর সঙ্গে মসজিদ ভবনটি বেশ পুরনো হওয়ায়ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে মত তার।

“পুলিশ লাইনসের ভেতরকার ৫০ বছরের পুরনো এই মসজিদের কোনো পিলার ছিল না, ফলে যখন বোমা বিস্ফোরিত হয়, তখন দেয়াল ও ছাদ মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে, আমার সন্তানরা (ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্য ও অন্যরা) ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েক ঘণ্টার জন্য আটকে পড়ে,” বলেন আনসারি।

তিনি জানান, পুলিশ চাইলে ভারী মেশিনের সাহায্যে দুই ঘণ্টার মধ্যে ওই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিতে পারতো, কিন্তু তারা তা করেনি।

“এই কারণে অনেকেই এখনো হাসপাতালে শ্বাস নিতে পারছেন,” বলেছেন তিনি।

নিহতের তালিকায় অনেকের নাম একাধিকবার এসেছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বৈজ্ঞানিক উপায়ে যাচাই বাছাইয়ের পর প্রকৃত সংখ্যা জানানোর আশ্বাসও দিয়েছেন।