আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলীয় দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআরসি) গত সপ্তাহের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির নিকট ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে এটি একটি।
দেশটির পূর্বাঞ্চলের দুটি গ্রামে সোমবারও মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে সাউথ কিভু প্রদেশের বুশুশু ও নিয়ামুকুবি গ্রামের ঘরবাড়ি হড়কা বানে ভেসে যায় এবং পুরো গ্রাম দুটি কাদা ও আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে, এতে বহু পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হন।
খালি একটি জায়গায় জমে থাকা মাটির স্তূপ দেখিয়ে অ্যালিয়েন্স মুফানজারা (২২) বলেন, “কাদার মধ্যে ওই জায়গায় আমাদের বাড়ি ছিল। আমরা আমাদের পরিবারের ছয়জনকে হারিয়েছি। আমাদের বাড়িতে পাঁচটি শিশু ও আমাদের মা মারা গেছেন।”
এখন শুধু মুফানজারা, তার ছোট ভাই ও বাবা বেঁচে আছেন।
“আমাদের পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কিছুই নেই,” বলেন তিনি।
জরুরি পরিষেবার কর্মীরা কয়েকদিন ধরে কালেহে অঞ্চলের ওই দুই গ্রামের ধ্বংসস্তূপ ও কাদার মধ্য থেকে মৃতদেহ বের করে আনছেন। এখানে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ভূমিধস ও বৃহস্পতিবার নদীর পাড় উপচে বন্যা দেখা দেয়।
“এটি নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়,” বলেন দেশটির সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুইয়াইয়া।
বুশুশুর বাসিন্দা বাহাতি কাবানগা (৩২) বলেন, “আমরা সবকিছু পেছনে ফেলে এসেছি।”
কাবানগা শুধু তার একমাত্র সন্তানকে রক্ষা করতে পেরেছেন, কিন্তু হারিয়েছেন ফুফু, ভাতিজা ও এক বোনকে।
রয়টার্সকে টেলিফোনে তিনি বলেন, “বৃষ্টি হচ্ছিল, তার মধ্যে কম্পন অনুভব করলাম আমরা। দূরে ঘরবাড়ি ধসে পড়ছে দেখে আমরা পালানোর সিদ্ধান্ত নেই।”
সোমবার সকালে সাউথ কিভুর গভর্নর থিও এনগওয়াবিদজে কাসি বলেন, “৪০০ জনের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এটি এখন নিশ্চিত।”
নদীতে এখনও অনেক মৃতদেহ ভাসতে থাকায় এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মৃতদেহ চাপা পড়ে আছে, এমন ধারণা থেকে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখনও কয়েকশ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
কঙ্গোর রেড ক্রস জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৯৮ জন নারী ও ৮২ শিশুসহ ২৭৪ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে।
বন্যায় ঘরবাড়ি ও স্কুল পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং বহু রাস্তা ভেঙে পড়ে ৮ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও আবর্জনার মধ্যে লাশ পড়ে থাকায় জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হতে পারে বলে রেড ক্রস সতর্ক করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার ওই এলাকায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে এবং একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।