স্থানীয় নির্বাচনে ভরাডুবি, দলের নেতৃত্ব ছাড়লেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

রাজধানী তাইপেসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকার নির্বাচনে বিরোধীদল কুওমিনতাংয়ের (কেএমটি) প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2022, 11:01 AM
Updated : 27 Nov 2022, 11:01 AM

স্থানীয় নির্বাচনে দল বাজে ফল করার পর ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন স্ব-শাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।

শনিবারের নির্বাচনে রাজধানী তাইপেসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকার ভোটে বিরোধীদল কুওমিনতাংয়ের (কেএমটি) প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বিভিন্ন এলাকা ও শহরের মেয়র পদের ২১টির মধ্যে ১৩টিই কুওমিনতাংয়ের কব্জায় গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিবাদের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় ইস্যু তাইওয়ানের এই স্থানীয় নির্বাচনের দিকে পশ্চিমা মহল অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের হতাশ হতে হল।

প্রেসিডেন্ট সাই শনিবারের নির্বাচনে তার দলের পক্ষে বেশি ভোট পড়বে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন।

"নির্বাচনের ফল এমন হবে প্রত্যাশা করিনি। সব দায়দায়িত্ব আমার কাঁধে নেওয়া উচিত এবং আমি এখনই ডিপিপির চেয়ারউইমেন থেকে পদত্যাগ করছি," বলেছেন সাই।

দলের শীর্ষ পদ ছাড়লেও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিতও করেছেন তিনি।

স্বশাসিত এই দ্বীপটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ সালে।

শনিবারের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের কাছে মূলত অপরাধ, আবাসন ও সমাজ কল্যাণের মত ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে। এখানে নির্বাচিতদের চীন বিষয়ে তাই ওয়ানের নীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখার এখতিয়ারও নেই।

তবে ভোটের আগে সাই এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভোটারদের প্রতি স্থানীয় এ নির্বাচনকে কাজে লাগিয়ে বেইজিংকে শক্ত বার্তা দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তাদের সেই আহ্বান খারিজ করে দেওয়ার পাশাপাশি তাইওয়ানবাসী ভোটার হওয়ার যোগ্যতার বয়স ২০ থেকে কমিয়ে ১৮তে নামানোর প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে।

শনিবার স্থানীয় নির্বাচনের পাশাপাশি এই প্রস্তাবের উপর গণভোট হয়েছিল।

চীন তাইওয়ানকে তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে; অন্যদিকে স্ব-শ্বাসিত দীপটির অনেকেই তাদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও সরকার বেইজিংয়ের শাসনের বাইরে থাকুক এমনটা দেখতে চান।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি দ্বীপটি সফর করার পর চলতি বছরের অগাস্টে তাইওয়ানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব, উত্তেজনা চরমে ওঠে।

পেলোসির সফরের পর বেইজিং তাইওয়ানের আশপাশে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালিয়েছিল।

কাগজে কলমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকলেও দ্বীপটিতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠাতে ওয়াশিংটন অঙ্গীকারাবদ্ধ।

তাইওয়ানের প্রধান দুটি দলের চীন সম্পর্কে মূল্যায়ন দুই রকমের।

রক্ষণশীল, ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিক মনোযোগী কেএমটি-কে চীনপন্থি ঘরানার দল মনে করা হয়।

তারা চীনের সঙ্গে নানান অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় যুক্ত হতে এবং মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণে আগ্রহী বলেই অনেকে মনে করেন।

অপরদিকে ডিপিপি চীনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চায়।

দলটির নেতা সাই ২০১৬ সালে বিপুল ভোটে জিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। বলেন, তাইওয়ানের প্রতি সম্মান দেখানো প্রয়োজন বেইজিংয়ের।

চীনের উদ্দেশ্যে তিনি বারবারই বলেছেন, কোনো ধরনের চাপে তাইপে মাথা নোয়াবে না।

২০২০ সালের ভোটেও সাই পুনর্নির্বাচিত হন। সেসময় হংকংয়ে বিক্ষোভ এবং তা থামাতে বেইজিংয়ের দমনপীডন তাইওয়ানে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন।