ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোকে দোষারোপ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
Published : 18 Mar 2022, 06:34 PM
বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি নেটোর সমালোচনা করেন। রাশিয়াকে নিন্দা করার আহ্বানে সাড়া দেবেন না বলেও জানান তিনি।
রামাফোসার এই মন্তব্য একজন মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ইউক্রেইন এবং পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
রামফোসা বলেছেন, “এই যুদ্ধ এড়ানো যেত, যদি নেটো বছরের পর বছর ধরে তার নিজ নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে উচ্চারিত হয়ে আসা সতর্কবার্তায় কান দিত যে, পূর্বদিকে মস্কোর দোরগোড়ায় নেটো সম্প্রসারণ অঞ্চলটিতে ছোটখাট নয়, বরং বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।”
তবে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রসন প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তি প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনকে প্রশ্রয় দিতে পারে না।”
রাশিয়া শুরু থেকেই তার সীমানার কাছাকাছি নেটো উপস্থিতির তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য অভিযান শুরু করেছে যাতে নেটো সম্প্রসারণ থেমে যায় এবং কিয়েভ নেটোতে যোগ দিতে না পারে। কিন্তু পশ্চিমারা রাশিয়ার এই উদ্বেগ উপেক্ষা করে এসেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্রীকরণের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি “বিশেষ সামরিক অভিযান” ঘোষণা করেছেন। তিনি এটি নিশ্চিত করতে চান যে, ইউক্রেইন রাশিয়া কিংবা দনবাস প্রজাতন্ত্রের জন্য আর হুমকি হবে না।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও এর নেটো মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনকে গ্রাস করার জন্য একটি ‘বিনা প্ররোচনায়’ যুদ্ধ শুরুর অভিযোগ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা তার বক্তব্যে জানিয়েছেন যে, পুতিন ব্যক্তিগতভাবে তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই নেতা আরও বলেছেন যে, তিনি এখনও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেননি, তবে তিনি বলতে চান।
রামাফোসা বলেন, “কিছু মানুষ আছেন যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদেরকে খুবই বৈরি একটি অবস্থান নেওয়া উচিত বলে চাপ সৃষ্টি করছেন। আমরা যে অবস্থান নিতে চলেছি তা হচ্ছে (বরং)… সংলাপ হওয়া উচিত- এটির ওপর জোর দেওয়া। চিল্লাচিল্লি, গলাবাজি করে সংঘাতের কোনও সমাধান আসবে না।”
রামাফোসার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (যে দলটি ১৯৯৪ সালে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অবসানের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা শাসন করে আসছে) দৃঢ় সম্পর্ক ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সমর্থন করেছিল এই দল।
সেই কারণে কখনও কখনও দক্ষিণ আফ্রিকাকে পশ্চিমে রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সন্দেহের চোখে দেখে। যদিও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পর থেকে দেশটির এখনও উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রভাব আছে।
রামাফোসা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও পক্ষ নিতে না চাওয়ার অর্থ হল “কেউ কেউ এমনকী আমাদের কাছে (মধ্যস্থতাকারীর) ভূমিকা পালন করানোর জন্য আসছে।
“অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও দুর্দান্ত প্রভাব রয়েছে এমন ভান আমরা করতে চাই না। কিন্তু অন্যেরা আমাদের কাছে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে এক পক্ষর নিন্দা জানালে… আমরা যে ভূমিকা রাখতে পারি সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ হবে,” বলেন তিনি।