মালয়েশিয়ায় কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু ও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
Published : 21 Dec 2021, 12:54 PM
শনিবার সকাল থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত টানা তিনদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে ৮টি রাজ্যে তুমুল বন্যা দেখা দেয়, অনেক গ্রাম ও শহরের অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। এখনও অনেকে নিখোঁজ থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, জানিয়েছে বিবিসি।
সোমবার পর্যন্ত আনুমানিক ৫১ হাজার লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের পাহাং রাজ্যের বাসিন্দা। বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর একটি পাহাং।
বন্যায় রাজধানী কুয়ালালামপুরকে ঘিরে থাকা পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য সেলাঙ্গরেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সম্পদশালী ও জনবহুল রাজ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে কুয়ালালামপুর শহরতলীর বিভিন্ন অংশ পানিতে নিমজ্জিত দেখা গেছে।
অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অনেক লোক জড়ো হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
সোমবার দেশটিতে বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসে আর বন্যার পানি নামতে থাকায় অনেকেই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরে ফেরা শুরু করে।
“আমরা এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়েছি, সঙ্গে নিয়েছি কেবল বাচ্চাদের জন্মনিবন্ধন সনদসহ জরুরি কিছু কাগজপত্র। এগুলোই শুধু আনতে পেরেছি আমরা,” বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাজুয়াতু রেমলি।
দুর্যোগ মোকাবেলায় মালয়েশিয়ার সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বন্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে সতর্ক করেনি আর এখন তাদের উদ্ধার তৎপরতাও খুবই ধীরগতির।
“(কর্তৃপক্ষের) ধীর প্রতিক্রিয়াই আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার তিন দিন পর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী আজ সকালে এসে পৌঁছেছে এবং এখনও তারা তাদের নৌকাগুলোর নাট-বল্টু লাগানো নিয়েই ব্যস্ত, অথচ মানুষ মারা যাচ্ছে,” স্ব-উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি এমনটাই বলেছেন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে।
সেলাঙ্গরে বন্যার পানি বাড়তে থাকা অবস্থায়ও মালয়েশির দুটি বড় রাজনৈতিক দল তাদের বার্ষিক সভা চালিয়ে গিয়েছিল।
বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ক্লাং থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয এক আইনপ্রণেতা বন্যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়াকে ‘খুবই অপর্যাপ্ত’ ও ‘দুর্বল’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। টুইটারে স্থানীয় ভাষায় ‘খুনি সরকার’ হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দলবদ্ধ হয়ে অনেকে উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকে কায়াক ও লাইফ জ্যাকেটর মতো উপকরণ কিনছেন, অনেকে বাস্তুচ্যুতদের নিজের ঘরে আশ্রয় দিচ্ছেন।
আটকা পড়াদের উদ্ধারে কায়াক ও অন্যান্য উদ্ধার সরঞ্জাম কেনা আদিব হারিথ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্টারকে বলেছেন, “আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের সবার সঙ্গে টুইটারে পরিচয় হয়েছে আমার, তাদের সবারই অন্যকে সাহায্য করার আগ্রহ আছে। একসঙ্গে আমরা প্রায় ২০০ আটকা পড়া মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছি।”
প্রধানত মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূল বন্যাপ্রবণ; বিশেষ করে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যবর্তী বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় নিয়মিতই বন্যা দেখা যায়।