নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় একটি গ্রামে বিমানবাহিনীর হামলায় অর্ধশতাধিক বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন হামলায় আহত এক ব্যক্তি ও গ্রামটির এক বাসিন্দা।
Published : 29 Sep 2021, 04:30 PM
রোববার দাবান মাসারা গ্রামের একটি মাছবাজারে দুটি বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হয় বলে মঙ্গলবার এ দুইজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
হামলা এবং বেসামরিক নিহত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে নাইজেরিয়ার বিমান বাহিনীর সঙ্গে ফোনে ও মেসেজে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাদের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী এক যুগ ধরে কট্টরপন্থি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।
ওই লড়াইয়ে সহায়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ২ মাস আগে নাইজেরিয়াকে ৬টি এ-২৯ সুপার টুকানো যুদ্ধবিমান দিয়েছিল। অতীতে নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে বেসামরিক নিহতের রেকর্ড থাকায় তাদের কাছে অত্যাধুনিক এ যুদ্ধবিমান বিক্রির নিন্দা করেছিলেন সমালোচকরা।
রোববারের হামলায় তাৎক্ষণিকভাবেই অন্তত ৫০ জন নিহত হয়, বলেছেন হামলায় পায়ে আঘাত পাওয়ার কথা জানানো হুসাইনি।
“এদের মধ্যে আমার এক বন্ধুও আছে, মাত্র তিন সপ্তাহ আগে যার বিয়ে হয়েছিল,” নামের প্রথম অংশ ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ করা যাবে না এ শর্তে ফোনে এমনটাই বলেছেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, অর্থের বিনিময়ে শাদ হ্রদে মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছিল ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি)। ওই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ এখন জিহাদি এই গোষ্ঠীটির হাতেই।
আইএসডব্লিউএফপি’র অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করতে ওই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয়রা সেখানে মাছ ধরে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন দাবান মাসারা গ্রামের এক বাসিন্দা।
রোববার বিমান বাহিনীর হামলার পর গ্রামবাসীরা অন্তত ৬০টি মৃতদেহ দেখেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
“তারা আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ, যারা জীবনধারণের জন্য মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। তাদের ভুল হচ্ছে, তারা এমন এক জায়গায় মাছ ধরেছিল, যেটির ওপর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিধিনিষেধ আছে,” রয়টার্সকে বলেছেন গ্রামটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বাসিন্দা।
রোববার দাবান মাসারা গ্রামে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে নাইজেরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিবিসির দেখা এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় এক জেলে নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে বলে নাইজেরিয়ার বিমানবাহিনী দাবি করেছে।
জাতিসংঘের এক নিরাপত্তা প্রতিবেদনেও রোববার নাইজেরিয়ার বিমানবাহিনীর হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে; প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখেছে রয়টার্স। এ প্রতিবেদনেও এক জেলে নিহত ও ৬ জনের আহত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এই হামলা ও বেসামরিক নিহতের ঘটনা নাইজেরিয়াকে প্রপেলারচালিত হালকা আরও ৬টি এ-২৯ সুপার টুকানো যুদ্ধবিমান সরবরাহে প্রভাব ফেলবে কিনা, তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
নাইজেরিয়ার বিমানবাহিনীর বোমায় একটি শরণার্থী শিবিরের ১৭০ জন নিহতের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন দেশটিতে যুদ্ধবিমান সরবরাহের চুক্তি হিমাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
পরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ২০১৭ সালে নাইজেরিয়ার কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রিতে রাজি হন।