আফগানিস্তান থেকে নিজ নিজ নাগরিক, সেনা আর দেশত্যাগে ইচ্ছুকদের সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়ের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সদ্য ক্ষমতা দখলকারী তালেবান গোষ্ঠী।
Published : 29 Aug 2021, 10:36 AM
শনিবার তালেবানের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, তারা একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে মন্ত্রিসভা ঘোষণার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।
বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার নিন্দাও জানান জাবিহউল্লাহ্। তিনি বলেন, “আফগান ভূখণ্ডের ওপর স্পষ্ট হামলা এটি।”
তবে এই মাসের শেষে (৩১ অগাস্ট) বিদেশিরা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পরে তারা যাতে তালেবানের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক বজায় রাখে সে আহ্বানও জানিয়েছেন জাবিহউল্লাহ।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যাহার কার্যক্রম চলার মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা আইএসআইএস-কে। ওই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ জনের মৃত্যু হয়। এর জবাবে ওইদিনই ড্রোন হামলা চালিয়ে আইএসআইএস-কের একজন পরিকল্পনাকারীকে হত্যার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে তালেবান একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা ঘোষণার তারিখ নির্দিষ্ট না হলেও আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। পরে অবশ্য আরেকটি ‘ভয়েস মেসেজে’ তিনি রয়টার্সকে জানান, এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিসভার বিষয়ে জানা যাবে।
মন্ত্রিসভায় কোনো নারী স্থান পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবানের মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে তাদের নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে এবং কি ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে সে বিষয়ে তিনি কিছু অনুমান করতে পারছেন না।
দুই সপ্তাহ আগে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানের মুদ্রা মানের দ্রুত অবনতি হয়েছে, অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, লোকজন নগদ অর্থ তোলার আশায় ব্যাকগুলোর সামনে ভীড় করে বিক্ষোভ করছে, পণ্যমূল্য বাড়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে আবারও কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে অর্থ তোলার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার আফগানি (আফগানিস্তানের মুদ্রা), যা ২০০ ডলারের মতো।
জাবিহউল্লাহ জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করতে তারা এরইমধ্যে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেছেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে আফগানিস্তান একটি মানবিক দুর্যোগের মুখে পড়তে যাচ্ছে, বিশেষ করে সেদেশের একটি বড় অংশ কঠিন খরার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তারওপর তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ও দাতাগোষ্ঠীর অর্থ সাহায্যও বন্ধ হয়ে গেছে।
তালেবানের মুখপাত্র বলেন, নতুন সরকার একবার ক্ষমতা নেওয়ার পর অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করবে। তিনি বলেন, “আফগান মুদ্রার মানের পতন সাময়িক এবং পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। সরকার ব্যবস্থা কাজ করতে শুরু করলেই এটা স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।”