কানাডায় ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়া ও দ্বিতীয় এলিজাবেথের মূর্তি টেনে নামিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আবাসিক স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের গণকবর উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষোভের জেরে বিক্ষোভকারীরা মূর্তি ভেঙেছে।
Published : 02 Jul 2021, 09:26 PM
বৃহস্পতিবার ম্যানিটোবা প্রদেশের রাজধানী উইনিপেগে এ ভাঙচুর চালিয়ে উল্লাস করেছে বিক্ষোভকারীরা। একদল বিক্ষোভকারী এদিন কানাডার আদিবাসী শিশু মৃত্যুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ম্যানিটোবা আইনসভার দিকে অগ্রসর হয়।
সেখানেই বিক্ষোভের সময় ভবন প্রাঙ্গণ থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তি টেনে ফেলে দেয় তারা। কাছেই থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মূর্তিও তারা নামিয়ে ফেলে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়,পুরো বিক্ষোভই মোটামোটি শান্তিপূর্ণ থাকলেও মূর্তি নামানোর সময় পুলিশ স্টান বন্দুক ব্যবহার করেছে এবং একজনকে আটক করেছে।
এর আগে কানাডা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে কয়েকটি স্থানে গির্জাতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ভাঙচুরের সঙ্গেও গণকবর আবিষ্কারের ঘটনার সম্পর্ক আছে বলে পুলিশ মনে করছে।
বিবিসি জানায়, কানাডার প্রতিষ্ঠাকালে সিংহাসনে ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া। ব্রিটিশদের সঙ্গে কানাডা ফার্স্ট নেশন রানি ভিক্টোরিয়ার আমলেই আবাসিক স্কুলের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।
আবাসিক এইসব স্কুলের বেঁচে যাওয়া এক শিক্ষার্থী বেলিন্ডা ভ্যানডেনব্রোয়েক কানাডিয়ান সম্প্রচারক সিবিসি-কে জানান, যদিও মূর্তি টেনে নামানোর কাজে তিনি অংশ নেননি, তবুও রানির মূর্তি উপড়ে ফেলার ঘটনায় বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বোধ করছেন না তিনি।
“ভিক্টোরিয়া তার নীতি ও উপনিবেশবাদের বাইরে আমার কাছে কোনও অর্থ বহন করেন না। আপনার আর আমার কথা বলার এই মুহূর্তেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হচ্ছে সেই আমলে তার (ভিক্টোরিয়ার) ঔপনিবেশিক নীতির পরিণতির উপর নির্ভর করে”, বলেন বেলিন্ডা।
ওদিকে, রানিদের মূতি ভাঙার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। “রানির মূর্তি অসন্মান করাকে আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই” বলেন ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র।
“সম্প্রতি আদিবাসী শিশুদের কবর খুঁজে পাওয়ার হৃদয়বিদারক ঘটনায় আমরা শোক প্রকাশ করি। আমরা এরকম ঘটনার খবরকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং কানাডা সরকারের সঙ্গে আদিবাসীদের বিষয়ে যোগাযোগ রাখছি, বলেন ঐ মুখপাত্র।
সমাজের ‘মূলধারার অংশ হিসেবে প্রস্তুত করতে’ ১৯ ও ২০ শতকে অন্তত দেড় লাখ শিশুকে জোরপূর্বক নিজেদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয়।
ধারনা করা হয়, অন্তত ছয় হাজার শিক্ষার্থী এই স্কুলগুলোতে পড়ার সময় মারা যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করা হত। উইনিপেগে হাজারো মানুষ আবাসিক স্কুলের এই শিক্ষার্থীদের সম্মানে মিছিল করেছে।
গতবছর বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের হামলার লক্ষ্য হয়েছে সাম্রাজ্য, উপনিবেশবাদ এবং দাসত্বের প্রতীক নানা ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি। ২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিশ্ব বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।