নেতানিয়াহুকে সরাতে বিরোধী দলগুলোর গঠন করা জোট সরকার অনুমোদন নিয়ে ওইদিন পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে।
মঙ্গলবার এক টুইটে ইয়াশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়ার লাপিদ নিজেই একথা জানিয়েছেন। আর এ ভোটের জন্য ইসরায়েলের পার্লামেন্ট স্পিকার ১৩ জুন বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছেন।
তারপরই লাপিদ লেখেন, ‘‘ইসরায়েল এবং এর নাগরিকদের ভালর জন্য ঐক্য সরকার আসছে।”তবে কী ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুগের অবসান হতে চলেছে? জানা যাবে রোববারেই। নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি শেষ সময় পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে ডানপন্থি, বামপন্থি, মধ্যপন্থি এবং আরব দলগুলোকে নিয়ে নতুন যে জোট গঠন করা হয়েছে তারাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। যদি ১৩ জুন ভোটের মাধ্যমে নতুন সরকার পার্লামেন্টের স্বীকৃতি পেয়ে যায় তবে ওই দিনই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে এবং জাতীয়বাদী নেতা নাফতালি বেনেট নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন।
নতুন সরকার যাতে পার্লামেন্টের অনুমোদন না পায় তার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি। কিন্তু তারা নতুন জোটের সদস্যদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর যে চেষ্টা করেছিল তা ব্যর্থ হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে টানা ১২ বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু গত কয়েক বছরে নানা কারণে নাগরিকদের কাছে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েলে গত দুই বছরে চার চারটি পার্লামেন্ট নির্বাচনে হয়েছে। কিন্তু সরকার গঠনের মত যথেষ্ট আসন কেউ পায়নি।
সংকট সমাধানে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ইয়েশ আতিদ পার্টির ইয়ার লাপিদকে নতুন একটি জোট সরকার গঠনে জন্য এ মাসের শুরুর দিকে পার্লামেন্ট থেকে ২৮ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
নানা দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে লাপিদ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও এই জোট কতদিন টিকে থাকে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
লাপিদের জোটে ডানপন্থি, বামপন্থি, মধ্যপন্থি এমনকি আরব দলগুলোর সদস্যরাও রয়েছেন। ইসরায়েলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সরকার ব্যবস্থায় আরব সদস্যদের অংশগ্রহণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সাবেক কমান্ডো, নিজের চেষ্টায় প্রযুক্তি খাতের সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন বেনেট। উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত ৪৯ বছরের বেনেট ক্ষমতায় আরোহনের আগেই রাজনৈতিক জীবনকে যথেষ্ট আলোচিত করে তুলেছেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চাইতেও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।
বেনেটের ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাভিলাষ যথেষ্টই পুরনো। তবে যেভাবে তা পূরণ হতে চলেছে তা হয়ত তিনি নিজেও ভাবেননি। তার কট্টরপন্থি দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে জিতেছেন। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বেনেটের দলের আবস্থান যৌথভাবে পঞ্চম, কিন্তু তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। কারণ সরকার গড়তে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রধান দুটি পক্ষের কাছে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই জোট গঠনে বেনেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা লাপিদ- দুজনেই বেনেটকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন, সঙ্গে ছিল ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব। শেষ পর্যন্ত লাপিদের সঙ্গে থাকতেই মনস্থ করেছেন বেনেট। যদিও দুই নেতার আদর্শগত মতপার্থক্য বিস্তর।