বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ইসরায়েলের সম্ভাব্য এই নতুন নেতার পরিচয়।
ক্ষমতায় আরোহনের আগেই রাজনৈতিক জীবনকে যথেষ্ট আলোচিত করে তুলেছেন উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত বেনেট। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চাইতেও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার উচ্চাভিলাষ বেনেটের যথেষ্টই পুরনো। তবে যেভাবে তা পূরণ হতে যাচ্ছে, তা হয়ত তিনি নিজেও ভাবেননি। তার কট্টরপন্থি দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছে মাত্র ছয়টি আসনে। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বেনেটের দলের আবস্থান যৌথভাবে পঞ্চম, কিন্তু তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। কারণ সরকার গড়তে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রধান দুটি পক্ষের কাছে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই জোট গঠনে বেনেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী লাপিদের জোটের প্রধন শরিক নাফতালি বেনেট প্রথমে দু’বছরের জন্য জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। এরপর পালাবদল হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।
৪৯ বছর বয়সী নাফতালি বেনেটকে এক সময় নেতানিয়াহুর শিষ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হত। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিন্তু এরপর দুজনের মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি থেকে পদত্যাগ করে বেনেট যোগ দেন ধর্মীয় কট্টরপন্থি দল জিয়ুশ হোম পার্টিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় সাফল্যে ভূমিকা রেখে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।
অতি কট্টরপন্থি হিসেবে চিহ্নিত বেনেট ইসরায়েলকে একটি ইহুদি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতেই বেশি উদ্যোগী। তিনি বিশ্বাস করেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি- যা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল দখল করে রেখেছে- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ইসরায়েলই ওই ভূখণ্ডের দাবিদার।
দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলে বসতি নির্মাণ কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে আসছেন (ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধানও ছিলেন বেনেট), যদিও তিনি বলেছেন গাজার ওপর ইসরায়েলের কোনো দাবি নেই।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ এবং গণমাধ্যমে সপ্রতিভ নাফতালি বেনেট প্রায়ই বিদেশি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের আলোচনায় অংশ নেন এবং ইসরায়েলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই দেন।
ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে একবার এক ইসরায়েলি আরবকে গালাগাল পর্যন্ত করেছিলেন এই উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা।
ওই আলোচনায় আরব সদস্যটি বলেছিলেন, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের কোনো অধিকার নেই ইহুদিদের। তার প্রতিক্রিয়া ওইভাবে দেখিয়েছিলেন বেনেট।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন না ইয়ামিনা দলের প্রধান। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে তিনি অতি কঠোর ভাষায় নাকচ করে থাকেন।
বেনেট পুরোপুরি ইহুদি সংস্কৃতি মেনে চলেন এবং ইহুদিদের ধর্মীয় টুপি ‘কিপ্পা’ ব্যবহার করেন। ২০১৪ সালে একটি দলীয় প্রচার কর্মসূচিতে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও হারেৎজ পত্রিকার সমালোচনা করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাটকীয় একটি ভিডিওতেও অবতীর্ণ হন।
বিবিসি লিখেছে, রাজনীতিতে নামার আগে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসায়ীক সমৃদ্ধি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বেনেটকে।
২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি দিনে ১৭টা স্টেক খাই না, ব্যক্তিগত জেট বা ইয়টেও চড়ি না। সহজ কথায়, এটাই আমাকে নিজের মর্জিমাফিক চলার স্বাধীনতা দিয়েছে।”