গাজায় গত এক সপ্তাহের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জনের সম্ভাবনাকে আরো কঠিন করে তুলছে বলেই মনে হচ্ছে।
Published : 19 May 2021, 08:33 AM
কী হতে পারত সেই কূটনৈতিক সাফল্য? উত্তর হল: সৌদি আরবের স্বীকৃতি আদায়।
তবে আট দিনে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেও এক দিক দিয়ে খুব বেশি দুঃশ্চিন্তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না ইসরায়েলকে।
তেল সমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য যে দেশগুলো গত বছর ইসরায়েলের সঙ্গে সন্ধি পাতিয়েছে, তারাও গাজায় হত্যা-হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা তারা কেউ এখনও বলেনি।
জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলের পুলিশের অভিযান এবং গাজা উপত্যাকায় বিমান হামলা- এসব ঘটনাকে ইসরায়েলের ‘নির্লজ্জ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ’ আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানিয়েছেন আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা। তবে সেখানেও সূক্ষ্মভাবে তারা ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ‘আব্রাহাম চুক্তির’ মধ্য দিয়ে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গত বছর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।
সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে আমিরাতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানানো হলেও এবার অন্যপক্ষের জন্যও কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছে তারা।
আরব আমিরাত কিছু ক্ষেত্রে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসেরও সমালোচনা করছে, আর তাতে যেন ইসরায়েলের কথারই প্রতিধ্বনী থাকছে।
আমিরাতের ধর্মীয় নেতা ওয়াসিম ইউসুফ সম্প্রতি এক টুইটে লেখেন, “হামাস সাধারণ নাগরিকদের আবাসস্থলে রকেট হামলা করছে। যখন এর পাল্টা জবাব আসছে, তখন তারা চিৎকার করছে- ‘আরব আর মুসলমানরা কোথায়?’ নিরাপরাধ মানুষ ও শিশুদের জন্য আপনারা গাজাকে একটি কবরস্থানে পরিণত করেছেন।”
পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোর কিছু অংশের মধ্যে একটি সোশাল মিডিয়া হ্যাসট্যাগ ঘোরাঘুরি করছে, যেটায় বলা হচ্ছে “#প্যালেস্টাইন ইজ নট মাই কজ”।
দূরত্ব বজায় রাখছে সৌদি আরব
আরবে ইসরায়েলের নতুন মিত্রদের যে মনোভাব, তা সৌদি আরবের ভেতরে খুব একটা প্রবেশ করতে পারেনি এখনও।
একটা খুব চালু ধারণা হল, ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড়, ধনী ও ক্ষমতাশালী রাজ পরিবারটি গত বছর ইসরায়েলে সঙ্গে বাহরাইন ও আরব আমিরাতের সন্ধি পাতানোর পক্ষে কৌশলগত সমর্থনই দিয়েছিল। তবে তারা নিজেরা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি জানায়নি। আর এখন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আপাতত সেরকমক কোনো সম্ভাবনাও নেই।
আরবের ইন্টারনেটে ‘নট মাই কজ’ হ্যাশটাগের জবাবে অনেক সৌদি নাগরিক বাদশাহ সালমানের ছবি পোস্ট করেছেন তার উদ্ধৃতিসহ, যেখানে লেখা ‘দ্য প্যালেস্টাইনিয়ান কজ ইজ আওয়ার ফার্স্ট কজ’।
১৩ মে সৌদি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মক্কার ইমাম ‘আল্লাহর শত্রুদের’ বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিজয়ের জন্য দোয়া করছেন।
ব্রিটেনের থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের সহযোগী ফেলো নেইল কুইলিয়াম বলেন, আগামী দুই বছরের জন্য সৌদি আরবের শাসকরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা ভাববেন- এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ আপাতত নেই।
গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের এবং তারপর সুদান ও মরক্কো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলে তার নিন্দা জানায় ফিলিস্তিন।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে এসব দেশ একটি ঐক্যের অবস্থান থেকে সরে গেছে, যার মূল কথা ছিল- শান্তি তখনই সম্ভব যখন ইসরায়েল দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যাবে।
রিয়াদের তরুণ আবদুলরহমান আল-তোয়াজরির মতে, যেসব আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে, তাদের আবারও সেটা ভেবে দেখা উচিত, কারণ ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে তার বিশ্বাস হয় না।
“ঐক্যই শক্তি, তাই যদি আরব মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়, সংঘাত বন্ধ হবে। এটা অনেক আগেই হতে পারত যদি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকত।”
তবে আরব আমিরাতসহ ইসরায়েলের নতুন বন্ধুরা সম্ভবত ওই সন্ধির পেছনে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে ফেলেছে, যেখান থেকে হুট করে সরে আসা সম্ভব না।
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি পর্যটন, বিনিয়োগ ও জ্বালানি থেকে প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে গতি আনছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ইসরায়েলের গ্যাসক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব কেনার পরিকল্পনা করছে এবং দুবাইয়ের বন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হাইফা বন্দরের কাজ পাওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে।
আমিরাতের বিখ্যাত বিশ্লেষক আব্দুলখালেক আব্দুল্লা বলেন, “আব্রাহাম চুক্তি এমন এক প্রক্রিয়া, যেটা আবার আগের অবস্থায় ফেরানো অসম্ভব। এটা খুব স্পষ্ট যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় অগ্রাধিকার ও কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সমন্বয় করেই চুক্তিটি করা হয়েছে, তাই এখান থেকে ফিরে আসার আর পথ নেই।”