“আমার একটি খামারের শেডে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করেছি, সেটাতে এবার একটা মুরগিও মরে নাই।”
Published : 04 May 2024, 10:25 PM
চলমান দাবদাহে খামারে ব্যাপক হারে মুরগির মৃত্যুর খবর আসার মধ্যে রাজধানীতে একটি আলোচনায় খামারের শেডে টিনের বদলে সিমেন্ট শিট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানানো হয়, এই শিটের কারণে খামারের ভেতরে উত্তাপ কম থাকে। ফলে মুরগি বা গরুর কষ্ট কম হয়।
তীব্র গরমে মুরগির মড়কের পাশাপাশি গরুর দুধ উৎপাদনও কমে গেছে বলেও খামারিতা জানান।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ‘তীব্র দাবদাহে প্রাণিসম্পদ ক্ষতি প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।
এর আয়োজন করে বাংলাদেশ সিমেন্ট শিট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিসিএসএমএ।
সিমেন্ট শিট নির্মাতাদের সংগঠনের সভাপতি মুসাদ্দিক হোসেন বলেন, দেশে সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৫৫ লাখ। দাবদাহে মারা যাচ্ছে এর ৭ থেকে ৮ শতাংশ। এই অবস্থায় তারা এ শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য এই আলোচনার আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, “দাবদাহ প্রতিরোধে পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের শেডে সিমেন্ট শিট ব্যবহার একটি প্রতিরোধমূলক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সব পোল্ট্রি/ডেইরি শেডে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করে আসছে বলেও জানানো হয় আলোচনায়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলার খামারি এ কে ফজলুল হক বলেন, “আমার একটি খামারের শেডে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করেছি, সেটাতে এবার একটা মুরগিও মরে নাই। বাকি খামারগুলোতে প্রতিদিন মুরগি মরেছে অন্তত ২০ টা করে।”
সভায় জানানো হয়, সিমেন্ট শিটের ৬ স্তরের কারণে গরমে শেডের ভেতরে তাপমাত্রা কম থাকে। যার ফলে গরমের কারণে মুরগি এবং গবাদি পশুর হিট স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকে, মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
গরমে খামারে কী সংকট
আলোচনায় তীব্র গরমে পোলট্রি ও ডেইরি খাতের সংকটগুলোও উঠে আসে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. এমরান হোসেন বলেন, দাবদাহে প্রতিটি খামারে উৎপাদন কমেছে এবং হিট স্ট্রোকে গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। ডেইরি ও গরু মোটাতাজাকরণ খামারে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বহু গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে।
দেশে ডিম ও মাংস উৎপাদন প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মহসিন বলেন, ব্যাপক সংখ্যক মুরগি স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সিমেন্ট শিট ব্যবহারও একটি অন্যতম ব্যবস্থা।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিনের ডিন আনোয়ারুল হক বেগ বলেন, “সম্প্রতি এই শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা খামারিদের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সকলকে খামারিদের কাছে সহায়তা করতে এগিয়ে যেতে হবে “
ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, “আগামীতে ডিম ও মুরগির দাম বাড়বে, এটাতে কারও হাত নেই। ডিম নষ্ট হচ্ছে, মুরগি মরছে তাই ঘটতি পড়বে সামনে। আর যখনই দাম বাড়ে পোল্ট্রি শিল্পে যারা আছে তাদের প্রতি সবার আক্রোশ বাড়ে।”
গাজীপুর জেলার ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকরাম খান বলেন, “গত এক মাসে খামারিরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। দশ মিনিট পরে পরে বিদ্যুৎ চলে যায়, আমরা পানি পাব কোথায়? যে গরু ২০ লিটার দুধ দিত, গরমে সেই গরু এখন দুধ দিচ্ছে ১০ লিটার।”
তিনি বলেন, “খামারিদের এক দিকে পশুপাখি মারা যাচ্ছে এটার মানসিক চাপ, আরেকদিকে ব্যাংকের চাপ। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখন খামারিরা পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে।”
আরও পড়ুন: