ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশে উন্নিত করতে চায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক নজরদারি সংস্থা আইএইএ।
Published : 02 Jan 2021, 04:14 PM
যদি তাই হয় তবে সেটা হবে ইরান পরমাণু চুক্তির সব থেকে বড় লঙ্ঘন।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা ওই চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ৪ শতাংশের নিচে রাখতে হবে। চুক্তির শুরুতে সব ঠিকঠাকই চলছিল।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির উপর পুনরায় কঠোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
তার পরপরই ইরান চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু চু্ক্তির অংশীদার বাকি দেশগুলোর হস্তক্ষেপে তেহরান শান্ত হয়। যদিও তারপর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে নানা সময়ে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ইরানও নানা ঘটনার জেরে চুক্তি প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল অটোমেটিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) জানায়, ইরান এক চিঠিতে তাদেরকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। বলেছে, তারা তাদের ‘ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’ এ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে চায়া।
ইরানের কোম নগরীতে পাহাড়ের নিচে মাটির অনেক গভীরে এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষেত্রটি অবস্থিত।
তবে ইরান কবে নাগাদ ‘তাদের এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করতে চায় সে সম্পর্কে চিঠিতে কিছু উল্লেখ করেনি’ বলে জানায় আইএইএ।
পরমাণু চুক্তির অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে ইরানের উপর বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সর্বোচ্চমাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তখন থেকেই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি ছিল।
নভেম্বরে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহকে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যার পর গতমাসে দেশটির পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়। যেখানে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশে উন্নিত করা শুরু করতে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, যদি আগামী দুই মাসের মধ্যে ইরানের তেল রপ্তানির উপর এবং দেশটির অর্থনীতির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হয় তবে ইরান সরকার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়াবে।
এছাড়া ওই আইনে আরো বলা হয়, শর্ত মানা না হলে ইরানের নাতানজ ও ফোর্দো পরমাণু ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
ইরান পরমাণু চুক্তির বাকি অংশীদার যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন এখনও আশা করছে তারা ইরান পরমাণু চুক্তি বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় বিদায় নিচ্ছে ট্রাম্প সরকার। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরান পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।
বাইডেন বলেছেন, যদি ইরান ‘পরমাণু চুক্তির সব শর্ত কঠোরভাবে অনুসরণ করে’ তবে তিনি ইরানের উপর থেকে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন।