ফ্রান্সে গির্জায় ছুরি হামলায় নিহত ৩, জেদ্দার ফরাসি কনস্যুলেটেও হামলা

ফ্রান্সের নিস শহরের একটি গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার মধ্যেই ঘটে গেছে আরও দুটো হামলার ঘটনা। যার একটি হয়েছে ফ্রান্সের আভিনিওঁ শহরের কাছে এবং অপরটি সৌদি আরবের ফরাসি কনস্যুলেটে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 10:15 AM
Updated : 29 Oct 2020, 07:24 PM

ফ্রান্সে নিস শহরে হামলার দিন বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই এই পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে।

নিস শহরে গির্জায় হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় আভিনিওঁ শহরের কাছে একটি এলাকায় পুলিশ এক বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে। ওই ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবর’’ বলে বন্দুক নিয়ে পথচারী এবং পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল।

ওদিকে, আরেকটি ঘটনায় সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্রান্সের কনস্যুলেটে এক রক্ষীর ওপর ছুরি হামলার পর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। ছুরির আঘাতে আহত ওই রক্ষীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছে ফরাসি দূতাবাস।

ফ্রান্সের নিস শহরের মেয়র খ্রিশ্চ এস্থুজি গির্জায় হামলার ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। টুইটারে তিনি জানান, শহরের নতর-দাম গির্জার ভিতরে অথবা কাছে ছুরি হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।পুলিশ হামলাকারীকে আটক করেছে।

হামলাকারী ছুরি দিয়ে এক নারীর শিরশ্ছেদ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মেয়র জানান, হামলাকারী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করছিল। তাকে আটক করার পরও সে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছিল। গির্জার ভিতরে নিহতদের মধ্যে একজনকে গির্জারটির ওয়ার্ডেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের মেয়র এস্থুজি বলেন, “আটক করার সময় সন্দেহভাজন ছুরি হামলাকারীকে গুলি করে পুলিশ, সে বেঁচে আছে, তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অনেক হয়েছে। আমাদের অঞ্চল থেকে ইসলামো-ফ্যাসিবাদ মুছে ফেলার জন্য এবার শান্তির আইন থেকে ফ্রান্সের সরে আসার সময় হয়েছে।”

চলতি মাসের প্রথমদিকে প্যারিসের শহরতলীতে প্রকাশ্য দিবালোকে এক শিক্ষককে গলা কেটে হত্যার ঘটনার ধরনের সঙ্গে এ ঘটনার ধরনও মিলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ হামলায় তিন জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী কৌঁসুলির দপ্তর জানিয়েছে, তাদের হামলার ঘটনাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিক জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী পুলিশ গির্জার চারদিকে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনি বসিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ঘটনাস্থলে গেছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করছেন।

এর আগে ১৬ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলীতে ৪৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল পেটিকে শিরশ্ছেদ করে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই দেশটিতে আবার ছুরি হামলায় শিরশ্ছেদের ঘটনা ঘটল।

ওই শিক্ষক ক্লাসরুমে নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যাঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন বলে ফ্রান্সের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছিল। পেটিকে হত্যার পর তার ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

ম্যাক্রোঁর ওই বিবৃতির নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ওদিকে, ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনের নিন্দা করেছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ।

এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই ফ্রান্সে ফের নতুন হামলা হল।

ফ্রান্সে গত কয়েকবছর ধরেই জঙ্গিরা দফায় দফায় সহিংস হামলা চালিয়ে আসছে। গত মাসেই ফ্রান্সের রম্য ম্যাগাজিন শার্লি এবদুর পুরনো কার্যালয়ের কাছে দুই সাংবাদিক ছুরিকাহত হয়েছে।

বিতর্কিত কার্টুন ছাপার জেরে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি প্যারিসে শার্লি এবদু কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে উগ্রপন্থি মুসলিম দুই ভাই। মারা গিয়েছিল ফ্রান্সের বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট-সহ ১২ জন।

তবে এবারে নিস শহরের হামলায় কার্টুনের কোনও যোগসূত্র আছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

চার বছর আগে ফ্রান্সের নিস শহর আরও একবার জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছিল। সেবার এক তিউনিসীয় বাস্তিল দিবস উদযাপনের সময় জনতার ভিড়ের মধ্যে ট্রাক চালিয়ে দিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করে।

আরও পড়ুন: