ঝুঁকি জেনেও গাফিলতি, ক্ষোভে ফুঁসছে লেবানন

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ক্ষতচিহ্ন এখনও দগদগে। নিখোঁজ অনেকে। ধ্বংসস্তুপ খুঁড়ে চলছে অনুসন্ধান। হতাহত বাড়তে পারে আরও। এ দায় কার? কেন এমন অবহেলা? সে প্রশ্নের জবাব চেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে লেবাননবাসী।

>>দ্যনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 6 August 2020, 01:08 PM
Updated : 6 August 2020, 01:13 PM

গত মঙ্গলবার বৈরুতের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটে। বলা হচ্ছে, বন্দরের একটি গুদামে হাজার হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিরাপদে রাখা হয়নি; যার কারণেই এতবড় মর্মান্তিক বিস্ফোরণ।

অথচ সরকারি নথি বলছে, লেবাননের কর্মকর্তারা এই রাসায়নিকের ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। তারপরও এটি সরানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিপজ্জনক এই পদার্থের গুদাম নিরাপদে কেন রাখা হল না? এর জন্য দায়ী কে? লেবাননবাসী সে প্রশ্নের জবাব চায়।

বিস্ফোরণে বৈরুতের অর্ধেকই ধুলিস্যাৎ হয়েছে। মারা গেছে শতাধিক মানুষ। শহরের অধিকাংশই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লাখো মানুষ ঘরহারা হয়েছে, নষ্ট হয়েছে খাবার। যতদূর চোখ যায় কেবল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসস্তুপ।

লেবাননবাসীদের অনেকেই এ বিস্ফোরণকে বছরের পর বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক নেতারাসহ শাসক শ্রেণীর অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার ফল হিসাবে দেখছেন। যার মূল্য দিতে হল বাসিন্দাদেরকে।

‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার প্রতিবেদন  বলছে, লেবাননের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের জন্য যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দুষছেন, সেটি আসলে লেবাননের নয়, বরং রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে করে লেবাননে পৌঁছেছিল।

ছয় বছরেরও বেশি সময় আগের ওই ঘটনায় মোজাম্বিকে যাওয়ার পথে থাকা ওই রুশ জাহাজ ফুটো হয়ে যাওয়ায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভিড়ে। জাহাজটিতে বহন করা হচ্ছিল ২ হাজার টনের বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। সার বানাতে কিংবা বোমা তৈরির কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার হয়।

জাহাজটির আর গন্তব্যে ফেরা হয়নি। অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিরোধের কারণে যে রুশ ব্যবসায়ী জাহাজটি লিজ নিয়েছিলেন তিনি চুক্তি বাতিল করেন। এরপরই জাহাজের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুতের বন্দরের কাছের একটি গুদামে নেওয়া হয়। এতবছর ধরে সেখানেই তা পড়ে ছিল।

লেবাননের এক আইনপ্রণেতা সেলিম আউন সরকারি নথির বরাত দিয়ে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই দাহ্য পদার্থ কীভাবে সরানো হবে সে পরামর্শ চেয়ে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেবাননের কাস্টমস কর্মকর্তারা আদালতে অন্তত ছয়বার চিঠি লিখেছেন।

তারা ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করা কিংবা লেবাননের সেনাবাহিনীকে তা অনুদান হিসাবে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন। কিন্তু বিচারবিভাগ তাদের চিঠির কোনও জবাব দেয়নি।

বৈরুত বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার হাসানও বুধবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাস্টমস এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বার বার অনুরোধের পরও ‘কিছুই হয়নি’। “আমাদেরকে বলা হয়েছিল, ওই পণ্য নিলামে বিক্রি করা হবে। কিন্তু তা আর কখনও হয়নি। বিচারবিভাগও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি,” বলেন তিনি।

গুদামে প্রাথমে আগুন কিভাবে লাগল সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন হাসান। বিস্ফোরণে তার চার কর্মচারি মারা গেছে বলে জানান তিনি। হাসান বলেন, “এখন দোষাদোষির সময় নয়, আমরা জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।”