বৈরুতে বিস্ফোরণ: শোকে স্তব্ধ লেবানন

রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১০০ জন নিহত এবং চার হাজারের বেশি মানুষ আহতের ঘটনায় শোক পালন করছে লেবানন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2020, 05:13 AM
Updated : 5 August 2020, 10:32 AM

দেশটিতে বুধবার শুরু হওয়া এ রাষ্ট্রীয় শোক শুক্রবার পর্যন্ত চলবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্তূপ সরাতে এখনও কাজ কারছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

পরিস্থিতি পর্যালোচনায় লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বুধবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

দেশটিতে দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

লেবানন রেড ক্রসের প্রধান জর্জ কেটানি বলেন, “আমরা একটি মারাত্মক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শী হলাম। বৈরুতের সবখানেই এখন আহত আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।”

পরিস্থিতি সামলাতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টার পরপর ওই বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে।

কম্পন অনুভূত হয় ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও, সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন।

বন্দরের এক বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয় আগুনের মাধ্যমে; বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার মেঘ কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক টুইটে বলেছেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা কোনোভাবে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।

বিস্ফোরণের কারণ বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়ীদের ‘সর্বোচ্চ সাজার’ মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৩ সালে একটি জাহাজ থেকে ওই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জব্দ করার পর সেগুলো বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। এরপর থেকে বিপদজনক ওই রাসায়নিক সেখানেই পড়ে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণস্থলের কাছেই ২০০৫ সালে এক গাড়ি বোমা হামলায় লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি নিহত হয়েছিলেন। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসে জাতিসংঘের এক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দেড় দশক আগের ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রায় হওয়ার কথা।  

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত লেবানন এমনিতেই পুরনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নতুন করোনাভাইরাসের সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি অবস্থানের কারণেও দেশটি নাজুক অবস্থানে আছে।

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে অসংখ্য মৃতদেহ ও ধ্বংসস্তূপ দেখার কথা জানিয়েছেন বিবিসির এক সাংবাদিক। হাসপাতালগুলোতে ছিল আহত ও রক্তাক্তদের উপচে পড়া ভিড়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের ছবিতে ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষকে আটকে পড়া অবস্থায় দেখা যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে তার কানে তালা লেগে গিয়েছিল।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড়ু গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

তিনি এই দুর্যোগ ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।